ঢাকা 9:17 pm, Tuesday, 17 June 2025

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলা জটিল, তাড়াহুড়া করা যাবে না: টবি ক্যাডম্যান

  • Reporter Name
  • Update Time : 08:24:55 pm, Monday, 27 January 2025
  • 46 Time View

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলো খুবই জটিল বলে উল্লেখ করেছেন চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান। তিনি মনে করেন, ট্রাইব্যুনালের মামলায় সময় লাগবে, তাড়াহুড়া করা যাবে না। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।

সোমবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন টবি ক্যাডম্যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অন্য প্রসিকিউটররা।

প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজে অংশগ্রহণ করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছেন উল্লেখ করে টবি ক্যাডম্যান সাংবাদিকদের বলেন, প্রসিকিউটর ও তদন্ত সংস্থার সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন এবং প্রতিনিয়ত তথ্য–প্রমাণ দেখছেন। ট্রাইব্যুনালের বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার বিষয় নিয়ে কয়েক দিন ধরেই তাঁরা আলাপ করছেন। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গেও আলাপ করবেন। তাঁর আশা, বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় পরিবর্তন আনা সম্ভব। যা বিচারপ্রক্রিয়াকে ন্যায্য ও মসৃণ করবে। এতে দেশীয় আইন ও আন্তর্জাতিক মান বজায় থাকবে।

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে ভারত নীরব আছে। এখন প্রসিকিউশন ও সরকার কী করতে পারে? এর জবাবে টবি ক্যাডম্যান বলেন, তিনি এবং চিফ প্রসিকিউটর বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সঙ্গে কাজ করছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছে। এ বিষয়ে ভারত যাতে ইতিবাচকভাবে সাড়া দেয়, সে জন্য দেশটির ওপর অবশ্যই চাপ দিতে পারে না বাংলাদেশ সরকার।

তবে টবি ক্যাডম্যান মনে করেন, শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে—এ বিষয়ে আশাবাদী হওয়ার মতো কারণ রয়েছে। বিচার ন্যায্য হবে। আত্মরক্ষার জন্য তাঁকে (শেখ হাসিনাকে) সব ধরনের সুযোগ দেওয়া হবে। এটা ভারতের বিষয় যে তারা দায়ুমুক্তির পক্ষে দাঁড়াবে, নাকি আইনের শাসনের পক্ষে। তাঁর আশা, ভারত আইনের শাসনের পক্ষে দাঁড়াবে।

আওয়ামী লীগের বিগত ১৬ বছরের শাসনামলের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছিল, সে সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান। তখন তাঁকে আসতে দেওয়া হয়নি।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় টবি ক্যাডম্যানকে। এমন প্রেক্ষাপটে নিরপেক্ষভাবে তাঁর পক্ষে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব কি না, এই প্রশ্নে টবি ক্যাডম্যান বলেন, তিনি একজন আইনজীবী। ইংল্যান্ড ও ওয়েলস বারের একজন সদস্য। তিনি কোনো মামলায় আসামিপক্ষ ও কোনো মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে কাজ করেন। তার মানে এই নয়, তাঁর নিরপেক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। পেশাদারত্ব, স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করাই তাঁর দায়িত্ব। আগে কী ঘটেছে, এটা বিষয় নয়। আগের ঘটনা দিয়ে নয়, এখন তাঁরা কী করছেন, তা দিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে।

ছয় পুলিশের বিরুদ্ধে পরোয়ানা

পুলিশের উচ্চ ও মধ্যম পর্যায়ের ছয় কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

পৃথক চারটি আলাদা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন।

পরে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকেই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকা শহরে সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। তবে আটজনের কারও নাম প্রকাশ করেননি তিনি।

এর আগে গতকাল রোববার চিফ প্রসিকিউটর জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে এখন পর্যন্ত ৯৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এর সঙ্গে আজ আরও আটজন যুক্ত হওয়ায় সব মিলিয়ে ১০৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো। বিদ্যমান ট্রাইব্যুনাল প্রথম গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন গত ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পাঠক প্রিয়

রাজশাহীতে করোনা পরীক্ষার একমাত্র ভরসা রামেক-এর পিসিআর ল্যাব

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলা জটিল, তাড়াহুড়া করা যাবে না: টবি ক্যাডম্যান

Update Time : 08:24:55 pm, Monday, 27 January 2025

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলো খুবই জটিল বলে উল্লেখ করেছেন চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান। তিনি মনে করেন, ট্রাইব্যুনালের মামলায় সময় লাগবে, তাড়াহুড়া করা যাবে না। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।

সোমবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন টবি ক্যাডম্যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ অন্য প্রসিকিউটররা।

প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজে অংশগ্রহণ করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছেন উল্লেখ করে টবি ক্যাডম্যান সাংবাদিকদের বলেন, প্রসিকিউটর ও তদন্ত সংস্থার সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন এবং প্রতিনিয়ত তথ্য–প্রমাণ দেখছেন। ট্রাইব্যুনালের বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার বিষয় নিয়ে কয়েক দিন ধরেই তাঁরা আলাপ করছেন। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গেও আলাপ করবেন। তাঁর আশা, বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় পরিবর্তন আনা সম্ভব। যা বিচারপ্রক্রিয়াকে ন্যায্য ও মসৃণ করবে। এতে দেশীয় আইন ও আন্তর্জাতিক মান বজায় থাকবে।

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে ভারত নীরব আছে। এখন প্রসিকিউশন ও সরকার কী করতে পারে? এর জবাবে টবি ক্যাডম্যান বলেন, তিনি এবং চিফ প্রসিকিউটর বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সঙ্গে কাজ করছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়েছে। এ বিষয়ে ভারত যাতে ইতিবাচকভাবে সাড়া দেয়, সে জন্য দেশটির ওপর অবশ্যই চাপ দিতে পারে না বাংলাদেশ সরকার।

তবে টবি ক্যাডম্যান মনে করেন, শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে—এ বিষয়ে আশাবাদী হওয়ার মতো কারণ রয়েছে। বিচার ন্যায্য হবে। আত্মরক্ষার জন্য তাঁকে (শেখ হাসিনাকে) সব ধরনের সুযোগ দেওয়া হবে। এটা ভারতের বিষয় যে তারা দায়ুমুক্তির পক্ষে দাঁড়াবে, নাকি আইনের শাসনের পক্ষে। তাঁর আশা, ভারত আইনের শাসনের পক্ষে দাঁড়াবে।

আওয়ামী লীগের বিগত ১৬ বছরের শাসনামলের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলছিল, সে সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান। তখন তাঁকে আসতে দেওয়া হয়নি।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় টবি ক্যাডম্যানকে। এমন প্রেক্ষাপটে নিরপেক্ষভাবে তাঁর পক্ষে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব কি না, এই প্রশ্নে টবি ক্যাডম্যান বলেন, তিনি একজন আইনজীবী। ইংল্যান্ড ও ওয়েলস বারের একজন সদস্য। তিনি কোনো মামলায় আসামিপক্ষ ও কোনো মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে কাজ করেন। তার মানে এই নয়, তাঁর নিরপেক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। পেশাদারত্ব, স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করাই তাঁর দায়িত্ব। আগে কী ঘটেছে, এটা বিষয় নয়। আগের ঘটনা দিয়ে নয়, এখন তাঁরা কী করছেন, তা দিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে।

ছয় পুলিশের বিরুদ্ধে পরোয়ানা

পুলিশের উচ্চ ও মধ্যম পর্যায়ের ছয় কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

পৃথক চারটি আলাদা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন।

পরে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকেই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকা শহরে সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। তবে আটজনের কারও নাম প্রকাশ করেননি তিনি।

এর আগে গতকাল রোববার চিফ প্রসিকিউটর জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে এখন পর্যন্ত ৯৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এর সঙ্গে আজ আরও আটজন যুক্ত হওয়ায় সব মিলিয়ে ১০৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো। বিদ্যমান ট্রাইব্যুনাল প্রথম গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন গত ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।