ঢাকা 12:19 am, Wednesday, 18 June 2025

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত নরওয়ের

  • Reporter Name
  • Update Time : 11:43:50 pm, Tuesday, 20 May 2025
  • 13 Time View

নরওয়ের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি স্তিনে রেনাতে হোহেইম আজ মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এসময় তিনি বাংলাদেশের প্রতি নরওয়ের অব্যাহত সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

সাক্ষাতকালে নরওয়েজীয় স্টেট সেক্রেটারি প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার স্তোরের শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে নরওয়ের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, ‘আপনি নরওয়েতে খুব পরিচিত একজন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই আপনার প্রশংসা করেন। আপনাদের সম্পর্ক বহুদিনের।’
প্রফেসর ইউনূস দুই দেশের গভীর এবং ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে নরওয়ে সবসময় বাংলাদেশের পাশে ছিল। আমাদের উন্নয়ন যাত্রায় আপনাদের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই।’

হোহেইম বহুপাক্ষিক সহযোগিতা এবং গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রতি নরওয়ের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রুপান্তর প্রক্রিয়াকে সমর্থন জানাতে আমরা এখানে এসেছি। আপনার কাঁধে অনেক বড় দায়িত্ব এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশাও অনেক।’
প্রফেসর ইউনূস সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জসমূহের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে অনেক প্রাণ ঝরে গেছে, আমাদের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগের সরকারের সময়ে প্রতি বছর প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। ব্যাংকের ঋণকে উপহার হিসেবে বিবেচনা করা হতো, আর আমরা বিশাল পরিমাণ বকেয়া বিলের বোঝা পেয়েছি।’

প্রফেসর ইউনূস বলেন, এখন এই কঠিন সময় অতিক্রম করা সত্ত্বেও বিশ্বের আস্থা বাংলাদেশের প্রতি ক্রমেই বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিডা সম্মেলনে নরওয়ের কিছু প্রতিষ্ঠানসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অনেক কোম্পানি —আমাদের পরিস্থিতি সরাসরি দেখার জন্য এসেছিল। তারা কেবল দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে নয়, বরং কৌতূহল ও বিশ্বাস থেকেই এসেছিল যে এখানে সম্ভাবনা রয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টা মানবিক ক্ষেত্রে বিশেষ করে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রতি নরওয়ের সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘এরাও মানুষ যারা স্বপ্ন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। রোহিঙ্গা তরুণদের আশা দেখাতে হবে। তরুণদের অনেকে সাত বা দশ বছর বয়সে এসেছিল, এখন তারা কিশোর। তারা ক্যাম্পেই বেড়ে উঠেছে। প্রতিদিন আরও শিশু জন্ম নিচ্ছে—একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে। তারা বাড়ি ফিরতে চায়, কিন্তু এখন এক অস্থিরতায় আটকে আছে। আমরা তাদের ভুলে যেতে পারি না।’
হোহেইম এই মানবিক সংকটের ভয়াবহতা স্বীকার করেন এবং নরওয়ের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। ‘বাংলাদেশ যেভাবে এই সংকট মোকাবেলায় নেতৃত্ব দিয়েছে, তা আমরা গভীরভাবে শ্রদ্ধা করি। আমরা উন্নয়ন সহযোগিতার বাইরেও সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত এবং গতিশীল অংশীদারিত্বে রূপান্তর করতে চাই।’

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. মোশারফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যসূত্র:বাসস

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পাঠক প্রিয়

রাজশাহীতে করোনা পরীক্ষার একমাত্র ভরসা রামেক-এর পিসিআর ল্যাব

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত নরওয়ের

Update Time : 11:43:50 pm, Tuesday, 20 May 2025

নরওয়ের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি স্তিনে রেনাতে হোহেইম আজ মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এসময় তিনি বাংলাদেশের প্রতি নরওয়ের অব্যাহত সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

সাক্ষাতকালে নরওয়েজীয় স্টেট সেক্রেটারি প্রধানমন্ত্রী জোনাস গার স্তোরের শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে নরওয়ের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, ‘আপনি নরওয়েতে খুব পরিচিত একজন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই আপনার প্রশংসা করেন। আপনাদের সম্পর্ক বহুদিনের।’
প্রফেসর ইউনূস দুই দেশের গভীর এবং ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে নরওয়ে সবসময় বাংলাদেশের পাশে ছিল। আমাদের উন্নয়ন যাত্রায় আপনাদের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই।’

হোহেইম বহুপাক্ষিক সহযোগিতা এবং গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রতি নরওয়ের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রুপান্তর প্রক্রিয়াকে সমর্থন জানাতে আমরা এখানে এসেছি। আপনার কাঁধে অনেক বড় দায়িত্ব এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশাও অনেক।’
প্রফেসর ইউনূস সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জসমূহের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে অনেক প্রাণ ঝরে গেছে, আমাদের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগের সরকারের সময়ে প্রতি বছর প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। ব্যাংকের ঋণকে উপহার হিসেবে বিবেচনা করা হতো, আর আমরা বিশাল পরিমাণ বকেয়া বিলের বোঝা পেয়েছি।’

প্রফেসর ইউনূস বলেন, এখন এই কঠিন সময় অতিক্রম করা সত্ত্বেও বিশ্বের আস্থা বাংলাদেশের প্রতি ক্রমেই বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিডা সম্মেলনে নরওয়ের কিছু প্রতিষ্ঠানসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অনেক কোম্পানি —আমাদের পরিস্থিতি সরাসরি দেখার জন্য এসেছিল। তারা কেবল দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে নয়, বরং কৌতূহল ও বিশ্বাস থেকেই এসেছিল যে এখানে সম্ভাবনা রয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টা মানবিক ক্ষেত্রে বিশেষ করে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রতি নরওয়ের সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘এরাও মানুষ যারা স্বপ্ন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। রোহিঙ্গা তরুণদের আশা দেখাতে হবে। তরুণদের অনেকে সাত বা দশ বছর বয়সে এসেছিল, এখন তারা কিশোর। তারা ক্যাম্পেই বেড়ে উঠেছে। প্রতিদিন আরও শিশু জন্ম নিচ্ছে—একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে। তারা বাড়ি ফিরতে চায়, কিন্তু এখন এক অস্থিরতায় আটকে আছে। আমরা তাদের ভুলে যেতে পারি না।’
হোহেইম এই মানবিক সংকটের ভয়াবহতা স্বীকার করেন এবং নরওয়ের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। ‘বাংলাদেশ যেভাবে এই সংকট মোকাবেলায় নেতৃত্ব দিয়েছে, তা আমরা গভীরভাবে শ্রদ্ধা করি। আমরা উন্নয়ন সহযোগিতার বাইরেও সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত এবং গতিশীল অংশীদারিত্বে রূপান্তর করতে চাই।’

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. মোশারফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যসূত্র:বাসস