বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রকৌশল বিভাগের প্রধান হাবিবুর রহমান। দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুদকে রয়েছে চারটি মামলা। বিতর্কিত কর্মকা-ের জেরে তাকে অপসারণে উচ্চ আদালতে করা হয়েছে রিট। ঘুষের টাকা ফেরত না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে রাজধানীর দুই থানায় একাধিক জিডি করেছেন ঠিকাদাররা। একদিকে এমন বিস্তর অভিযোগ, অন্যদিকে চলতি মাসের ২৩ তারিখ তার অবসরে যাওয়ার কথা। এসবের মধ্যেও বেবিচকের এ কর্মকর্তাকে এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সংস্থাটি।
সূত্র মতে, গত সোমবার বিকালে বেবিচকের বোর্ডসভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুই-তিন দিনের মধে?্য হাবিবুর রহমানকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে সরকারের কাছে আবেদন পাঠানো হবে। এমন সিদ্ধান্তের খবরে ক্ষুব্ধ বেবিচকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ মাসের ২৩ তারিখ হাবিবুর রহমানের অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
নিয়োগ সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, বেবিচকের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলায় এরই মধ্যে আসামি হয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিমান সচিব মহিবুল হক, যুগ্ম সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার, বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক ও বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান। বেবিচক আওতাধীন দেশের বিমানবন্দরগুলোতে উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়েছে। এরই মধ্যে থার্ড টার্মিনালসহ দেশের আটটি বিমানবন্দরে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত করছে দুদক। ৯০০ কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে মামলা হয়েছে। অথচ বোর্ডসভায় প্রকৌশল বিভাগের প্রধান হাবিবুর রহমানকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি জানান, হাবিবুর রহমান চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ করেন।
জানা গেছে, পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের সাথে ৮১২ কোটি টাকা দুর্নীতির চার মামলার আসামি প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এবং কেন তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না- তা জানতে চেয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এ রুলের পরও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। উল্টো তাকে প্রধান প্রকৌশলী পদে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বেবিচক কর্মকর্তাদের মধ্যে চলছে সমালোচনা। এ ধরনের সিদ্ধান্ত দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে, মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।
এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রস্তাবনায় স্বাক্ষর করেছেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া। তিনি এ বিষয়ে আমাদের সময়কে বলেন, যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তা না পাওয়ায় ওই কর্মকর্তাকে আরও এক বছরের জন্য নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রিটকারী সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান (তুষার) বলেন, বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে মহামান্য হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। বিবাদী পক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন- এমনটাই প্রত্যাশা করছি।
জানা গেছে, হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ আছে। টেন্ডারের কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েও কাজ না দেওয়ায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। সূত্র মতে, প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় প্রকৌশল বিভাগ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি দীর্ঘদিন বেবিচকের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় দুদক তদন্ত করে। অভিযোগে বলা হয়েছে, বেবিচকের যত মেগা প্রকল্প রয়েছে, প্রায় সবগুলোতেই অর্থ-বাণিজ্য করেছেন তিনি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেবিচকের প্রকৌশল বিভাগের প্রধান হাবিবুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া দেননি তিনি।