ঢাকা 3:47 am, Tuesday, 17 June 2025

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে গণমাধ্যমে সংগঠিত মিথ্যাচারের খতিয়ান প্রকাশ

  • Reporter Name
  • Update Time : 10:51:38 pm, Thursday, 5 June 2025
  • 6 Time View

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে গণমাধ্যমে সংগঠিত মিথ্যাচারের খতিয়ান প্রকাশ করেছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর ফ্যাক্ট চেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম বাংলাফ্যাক্ট।

বাংলাফ্যাক্টের অনুসন্ধান টিম জানায়, গত ৩ জুন, মঙ্গলবার রাতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন), ২০২৫’ জারি করে। অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়। তবে এতে মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান কিংবা ওই সরকারে থাকা অন্য নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি বাতিলের প্রসঙ্গ ছিল না। কিন্তু অধ্যাদেশটি জারির পরপরই রাত ১১টা ৪৪ মিনিটে দৈনিক সমকাল তাদের অনলাইন সংস্করণে ‘বঙ্গবন্ধুসহ ৪ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল’ শীর্ষক সম্পূর্ণ বিপরীত শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। এরপর মূলধারার বিভিন্ন পত্রিকা, নিউজ পোর্টাল ও টেলিভিশন একইভাবে অধ্যাদেশটি নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করে। ‘শেখ মুজিবসহ ৪ শতাধিক নেতার স্বীকৃতি বাতিল’ কিংবা ‘মুজিবনগর সরকারের সব নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল’ ইত্যাদি শিরোনামে সংবাদ প্রচারিত হতে থাকে।

বাংলাফ্যাক্ট জানায়, সমকাল, ইত্তেফাক, যুগান্তর, বিডিনিউজ২৪, আমাদের সময়, বাংলানিউজ২৪, ইনকিলাব, নিউজ ২৪, এখন টিভি, বাংলা ট্রিবিউন, দৈনিক বাংলা, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস, ঢাকা মেইল, ঢাকা পোস্ট, ঢাকা টাইমস২৪, খবরের কাগজ, বাংলা ট্রিবিউন, দেশ টিভি, কালবেলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে একই ধরনের খবর প্রচার করা হয়।

বাংলাফ্যাক্ট অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছে, দৈনিক সমকালের অনলাইন সংস্করণে ৩ জুন রাত ১১টা ৪৪ মিনিটে প্রথম এই ভুয়া সংবাদটি প্রকাশিত হয়। দৈনিক কালের কণ্ঠ ও বিবিসি বাংলাও মূল অধ্যাদেশটি যাচাই না করেই সমকালের বরাতে সংবাদ প্রকাশ করে। পত্রিকাটির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিটের সাংবাদিক আবু সালেহ রনি এই রিপোর্টটি তৈরি করেছেন। গত ২১ মার্চেও সমকালে ‘মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি থাকছে না শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার’ শিরোনামে সমকাল এই সাংবাদিকের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এটির ওপর ভিত্তি করে বিডিনিউজ ২৪-এ একটি মতামতও প্রকাশিত হয়। ৩ জুনের অধ্যাদেশ ঘিরে ছড়িয়ে পড়া ভুয়া প্রতিবেদনগুলোর উৎস হিসেবে ওই প্রতিবেদনটি কাজ করেছে বলে ধারণা করছে বাংলাফ্যাক্ট।

বাংলাফ্যাক্ট অনুসন্ধান টিম জানায়, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে কাজের জন্য পুরস্কার লাভ করেন আবু সালেহ রনি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ডিআরইউ থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ৬টিসহ মোট ১১টি পুরস্কার পান তিনি। ফেসবুকে শেখ হাসিনার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো, প্রোফাইল পিকচারে ‘উই অল আর শেখ হাসিনা’স মেন’ দেওয়াসহ ফেসবুকে তার কর্মকাণ্ড থেকে ধারণা করা যায়, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সমর্থক ছিলেন তিনি। জুলাই হত্যাযজ্ঞেও তাঁর নামে মামলা রয়েছে। তিনি বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিকের ঘনিষ্ঠ হিসেবেও সাংবাদিক মহলে পরিচিতি। আবু সালেহ রনি একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সর্বশেষ কমিটির প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদকও।

বাংলাফ্যাক্ট অনুসন্ধান টিম জানার চেষ্টা করে যে, ‘অধ্যাদেশে আসলে কী আছে, অপতথ্যের উদ্দেশ্যই বা কী? জারিকৃত অধ্যাদেশে দেখা গিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, সেখানে স্পষ্টত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রবাসী (মুজিবনগর) সরকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।’

‘সেখানে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা দেশের ভেতরে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামি, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, এরূপ সব বেসামরিক নাগরিক (ওই সময়ে যাদের বয়স সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে ছিল) তাঁরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।’

অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও এবং সমকালসহ অধিকাংশ পত্রিকা তাদের প্রতিবেদনে তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করলেও, শিরোনাম ও উপস্থাপনার ভঙ্গিতে জারিকৃত অধ্যাদেশকে ‘মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী’ হিসেবে চিত্রিত করার প্রবণতা দেখা গেছে বলে জানিয়েছে বাংলাফ্যাক্ট।

২০২২ সালের অধ্যাদেশে ‘মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা’র সঙ্গে বর্তমান অধ্যাদেশের তুলনা বিষয়ে বাংলাফ্যাক্ট জানায়, ‘মুজিবনগর সরকারের অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত এবং মুজিবনগর সরকারের সাথে সম্পৃক্ত সকল এমএনএ বা এমপিএ, যারা পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন তারা আগেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন। নতুন সংজ্ঞায় মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত এবং এমএনএ বা এমপিএদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’র বদলে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’

বাংলাফ্যাক্ট অনুসন্ধান টিম জানায়, ‘মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞাকে আওয়ামী লীগ যেভাবে দলীয়করণ করেছিল, সেটাকে রদ করার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে চলতি অধ্যাদেশে। ২০২২ সালে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়া’ কথাটি উল্লেখ ছিল। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ‘জনযুদ্ধের’ ইতিহাসকে আওয়ামী লীগের ইতিহাসে পরিণত করার প্রচেষ্টা ছিল।

কিন্তু নতুন অধ্যাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় সে স্থলে একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ, নতুন অধ্যাদেশে মুক্তিযুদ্ধকে আওয়ামী লীগের দলীয় বয়ানের বাইরে এনে জনগোষ্ঠীর জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম হিসেবে দেখাবার প্রয়াস রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞার পরিধি খেয়ালখুশি মতো বাড়িয়েছিল। এতে প্রবাসীসহ অনেক অবান্তর ও সেই সময়ে নাবালক ব্যক্তিরা মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট পেতে শুরু করেন।
তথ্যসূত্র:বাসস

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পাঠক প্রিয়

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে গণমাধ্যমে সংগঠিত মিথ্যাচারের খতিয়ান প্রকাশ

Update Time : 10:51:38 pm, Thursday, 5 June 2025

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে গণমাধ্যমে সংগঠিত মিথ্যাচারের খতিয়ান প্রকাশ করেছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর ফ্যাক্ট চেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম বাংলাফ্যাক্ট।

বাংলাফ্যাক্টের অনুসন্ধান টিম জানায়, গত ৩ জুন, মঙ্গলবার রাতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন), ২০২৫’ জারি করে। অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়। তবে এতে মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান কিংবা ওই সরকারে থাকা অন্য নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি বাতিলের প্রসঙ্গ ছিল না। কিন্তু অধ্যাদেশটি জারির পরপরই রাত ১১টা ৪৪ মিনিটে দৈনিক সমকাল তাদের অনলাইন সংস্করণে ‘বঙ্গবন্ধুসহ ৪ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল’ শীর্ষক সম্পূর্ণ বিপরীত শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। এরপর মূলধারার বিভিন্ন পত্রিকা, নিউজ পোর্টাল ও টেলিভিশন একইভাবে অধ্যাদেশটি নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করে। ‘শেখ মুজিবসহ ৪ শতাধিক নেতার স্বীকৃতি বাতিল’ কিংবা ‘মুজিবনগর সরকারের সব নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল’ ইত্যাদি শিরোনামে সংবাদ প্রচারিত হতে থাকে।

বাংলাফ্যাক্ট জানায়, সমকাল, ইত্তেফাক, যুগান্তর, বিডিনিউজ২৪, আমাদের সময়, বাংলানিউজ২৪, ইনকিলাব, নিউজ ২৪, এখন টিভি, বাংলা ট্রিবিউন, দৈনিক বাংলা, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস, ঢাকা মেইল, ঢাকা পোস্ট, ঢাকা টাইমস২৪, খবরের কাগজ, বাংলা ট্রিবিউন, দেশ টিভি, কালবেলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে একই ধরনের খবর প্রচার করা হয়।

বাংলাফ্যাক্ট অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছে, দৈনিক সমকালের অনলাইন সংস্করণে ৩ জুন রাত ১১টা ৪৪ মিনিটে প্রথম এই ভুয়া সংবাদটি প্রকাশিত হয়। দৈনিক কালের কণ্ঠ ও বিবিসি বাংলাও মূল অধ্যাদেশটি যাচাই না করেই সমকালের বরাতে সংবাদ প্রকাশ করে। পত্রিকাটির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিটের সাংবাদিক আবু সালেহ রনি এই রিপোর্টটি তৈরি করেছেন। গত ২১ মার্চেও সমকালে ‘মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি থাকছে না শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার’ শিরোনামে সমকাল এই সাংবাদিকের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এটির ওপর ভিত্তি করে বিডিনিউজ ২৪-এ একটি মতামতও প্রকাশিত হয়। ৩ জুনের অধ্যাদেশ ঘিরে ছড়িয়ে পড়া ভুয়া প্রতিবেদনগুলোর উৎস হিসেবে ওই প্রতিবেদনটি কাজ করেছে বলে ধারণা করছে বাংলাফ্যাক্ট।

বাংলাফ্যাক্ট অনুসন্ধান টিম জানায়, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে কাজের জন্য পুরস্কার লাভ করেন আবু সালেহ রনি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ডিআরইউ থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ৬টিসহ মোট ১১টি পুরস্কার পান তিনি। ফেসবুকে শেখ হাসিনার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো, প্রোফাইল পিকচারে ‘উই অল আর শেখ হাসিনা’স মেন’ দেওয়াসহ ফেসবুকে তার কর্মকাণ্ড থেকে ধারণা করা যায়, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সমর্থক ছিলেন তিনি। জুলাই হত্যাযজ্ঞেও তাঁর নামে মামলা রয়েছে। তিনি বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিকের ঘনিষ্ঠ হিসেবেও সাংবাদিক মহলে পরিচিতি। আবু সালেহ রনি একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সর্বশেষ কমিটির প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদকও।

বাংলাফ্যাক্ট অনুসন্ধান টিম জানার চেষ্টা করে যে, ‘অধ্যাদেশে আসলে কী আছে, অপতথ্যের উদ্দেশ্যই বা কী? জারিকৃত অধ্যাদেশে দেখা গিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, সেখানে স্পষ্টত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রবাসী (মুজিবনগর) সরকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।’

‘সেখানে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা দেশের ভেতরে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামি, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, এরূপ সব বেসামরিক নাগরিক (ওই সময়ে যাদের বয়স সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে ছিল) তাঁরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।’

অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও এবং সমকালসহ অধিকাংশ পত্রিকা তাদের প্রতিবেদনে তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করলেও, শিরোনাম ও উপস্থাপনার ভঙ্গিতে জারিকৃত অধ্যাদেশকে ‘মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী’ হিসেবে চিত্রিত করার প্রবণতা দেখা গেছে বলে জানিয়েছে বাংলাফ্যাক্ট।

২০২২ সালের অধ্যাদেশে ‘মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা’র সঙ্গে বর্তমান অধ্যাদেশের তুলনা বিষয়ে বাংলাফ্যাক্ট জানায়, ‘মুজিবনগর সরকারের অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত এবং মুজিবনগর সরকারের সাথে সম্পৃক্ত সকল এমএনএ বা এমপিএ, যারা পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন তারা আগেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন। নতুন সংজ্ঞায় মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত এবং এমএনএ বা এমপিএদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’র বদলে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’

বাংলাফ্যাক্ট অনুসন্ধান টিম জানায়, ‘মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞাকে আওয়ামী লীগ যেভাবে দলীয়করণ করেছিল, সেটাকে রদ করার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে চলতি অধ্যাদেশে। ২০২২ সালে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়া’ কথাটি উল্লেখ ছিল। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ‘জনযুদ্ধের’ ইতিহাসকে আওয়ামী লীগের ইতিহাসে পরিণত করার প্রচেষ্টা ছিল।

কিন্তু নতুন অধ্যাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় সে স্থলে একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ, নতুন অধ্যাদেশে মুক্তিযুদ্ধকে আওয়ামী লীগের দলীয় বয়ানের বাইরে এনে জনগোষ্ঠীর জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম হিসেবে দেখাবার প্রয়াস রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞার পরিধি খেয়ালখুশি মতো বাড়িয়েছিল। এতে প্রবাসীসহ অনেক অবান্তর ও সেই সময়ে নাবালক ব্যক্তিরা মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট পেতে শুরু করেন।
তথ্যসূত্র:বাসস