ঢাকা 1:27 pm, Tuesday, 17 June 2025

নজরুল পুরস্কার-২০২৫ পেলেন আনোয়ারুল হক ও শবনম মুশতারী

  • Reporter Name
  • Update Time : 10:53:17 pm, Sunday, 25 May 2025
  • 10 Time View

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বাংলা একাডেমি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নজরুল পুরস্কার-২০২৫ প্রদান করা হয়েছে। এ বছর পুরস্কার পেয়েছেন নজরুল গবেষক অধ্যাপক আনোয়ারুল হক এবং নজরুল সংগীতশিল্পী শবনম মুশতারী।

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টাঙ্গাইল সরকারি সাদত কলেজের সহকারী অধ্যাপক জগলুল আসাদ। তার প্রবন্ধের শিরোনাম ছিল ‘নন্দনের বাঁশরি ও তূর্য: নজরুলের সাহিত্যচিন্তার গতিময়তা’। বাংলা গবেষণা বিভাগের পরিচালক আফজালুল বাশার প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘নজরুলের চিন্তা আজও প্রাসঙ্গিক। জুলাই অভ্যুত্থানে আমরা নজরুলের বিদ্রোহের ছায়া দেখি।’

নজরুল সাহিত্যের নন্দনতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘নজরুলের সাহিত্য সে সময়কার প্রচলিত সাহিত্যধারার তুলনায় এতটাই ব্যতিক্রম ছিল যে একে নির্দিষ্ট কোনো নন্দনতাত্ত্বিক কাঠামোয় বাঁধা যায় না।’

নজরুলের সাহিত্যভাবনা আবিষ্কারে গবেষকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ব্যতিক্রমী ধারা আমাদের দীর্ঘদিনের সাহিত্যিক সংকীর্ণতা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারে। একইসঙ্গে এটি সাহিত্যিক নন্দনের নতুন কিছু মাত্রা উন্মোচন করতে পারে, যা নজরুলচর্চাকে একটি নতুন মানসিক কাঠামোয় প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে।’
নজরুল গবেষক আফজালুল বাশার বলেন, ‘নজরুল এমন একজন সাহিত্যিক, যাঁকে কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা যায় না। তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল প্রান্তিক মানুষের জন্য। তাঁর লেখায় প্রেম, বিদ্রোহ, দুঃখ, রাজনীতি ও ধর্ম- সব কিছুর সুর অনুরণিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নজরুল কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না, যদিও কেউ কেউ তাঁকে সাম্প্রদায়িক রূপে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন। তিনি ছিলেন একেবারেই আলাদা।’

আফজালুল বাশার আরও বলেন, ‘নজরুল ছিলেন সাহসী। তিনি ব্রিটিশ শাসন ও সমাজের অনিয়মকে সাহিত্যে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন এবং সত্যের সঙ্গে কোনোদিন আপস করেননি, এমনকি মৃত্যুভয়কেও উপেক্ষা করেছেন। বাঙালির রক্তে তিনি সাহসের বীজ বপন করে গেছেন।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে জগলুল আসাদ ইউরোপীয় সাহিত্যের সঙ্গে তুলনা করে নজরুলের সাহিত্যচিন্তার একটি রূপরেখা উপস্থাপন করেন। প্রবন্ধে ইউরোপীয় সাহিত্যচিন্তার সঙ্গে নজরুলের ভিন্নতা ও স্বাতন্ত্র্য ব্যাখ্যা করেন।

বাংলা একাডেমির সভাপতি আবুল কাসেম ফজলুল হক নজরুল পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ করতে তাঁদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ শুরুর পর থেকে আমাদের সাহিত্য বৈশ্বিক দক্ষিণের সবচেয়ে সমৃদ্ধ সাহিত্যে পরিণত হয়েছে। কিন্তু জাতিগত হীনম্মন্যতা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রগতির অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি জাতীয় আত্মবোধে থাকা হীনম্মন্যতা দূর করতে নজরুলের সাহিত্যচিন্তাকে দলীয় বা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করে সবাইকে বাস্তব প্রেক্ষাপটে অধ্যয়ন করার আহ্বান জানান।

সেমিনার শেষে নুর হোসেন রানার নির্দেশনায় ‘দেখব এবার জগৎটাকে’ শিরোনামের একটি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।
তথ্যসূত্র:বাসস

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পাঠক প্রিয়

নজরুল পুরস্কার-২০২৫ পেলেন আনোয়ারুল হক ও শবনম মুশতারী

Update Time : 10:53:17 pm, Sunday, 25 May 2025

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বাংলা একাডেমি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নজরুল পুরস্কার-২০২৫ প্রদান করা হয়েছে। এ বছর পুরস্কার পেয়েছেন নজরুল গবেষক অধ্যাপক আনোয়ারুল হক এবং নজরুল সংগীতশিল্পী শবনম মুশতারী।

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টাঙ্গাইল সরকারি সাদত কলেজের সহকারী অধ্যাপক জগলুল আসাদ। তার প্রবন্ধের শিরোনাম ছিল ‘নন্দনের বাঁশরি ও তূর্য: নজরুলের সাহিত্যচিন্তার গতিময়তা’। বাংলা গবেষণা বিভাগের পরিচালক আফজালুল বাশার প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘নজরুলের চিন্তা আজও প্রাসঙ্গিক। জুলাই অভ্যুত্থানে আমরা নজরুলের বিদ্রোহের ছায়া দেখি।’

নজরুল সাহিত্যের নন্দনতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘নজরুলের সাহিত্য সে সময়কার প্রচলিত সাহিত্যধারার তুলনায় এতটাই ব্যতিক্রম ছিল যে একে নির্দিষ্ট কোনো নন্দনতাত্ত্বিক কাঠামোয় বাঁধা যায় না।’

নজরুলের সাহিত্যভাবনা আবিষ্কারে গবেষকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ব্যতিক্রমী ধারা আমাদের দীর্ঘদিনের সাহিত্যিক সংকীর্ণতা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারে। একইসঙ্গে এটি সাহিত্যিক নন্দনের নতুন কিছু মাত্রা উন্মোচন করতে পারে, যা নজরুলচর্চাকে একটি নতুন মানসিক কাঠামোয় প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে।’
নজরুল গবেষক আফজালুল বাশার বলেন, ‘নজরুল এমন একজন সাহিত্যিক, যাঁকে কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা যায় না। তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল প্রান্তিক মানুষের জন্য। তাঁর লেখায় প্রেম, বিদ্রোহ, দুঃখ, রাজনীতি ও ধর্ম- সব কিছুর সুর অনুরণিত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নজরুল কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না, যদিও কেউ কেউ তাঁকে সাম্প্রদায়িক রূপে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন। তিনি ছিলেন একেবারেই আলাদা।’

আফজালুল বাশার আরও বলেন, ‘নজরুল ছিলেন সাহসী। তিনি ব্রিটিশ শাসন ও সমাজের অনিয়মকে সাহিত্যে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন এবং সত্যের সঙ্গে কোনোদিন আপস করেননি, এমনকি মৃত্যুভয়কেও উপেক্ষা করেছেন। বাঙালির রক্তে তিনি সাহসের বীজ বপন করে গেছেন।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে জগলুল আসাদ ইউরোপীয় সাহিত্যের সঙ্গে তুলনা করে নজরুলের সাহিত্যচিন্তার একটি রূপরেখা উপস্থাপন করেন। প্রবন্ধে ইউরোপীয় সাহিত্যচিন্তার সঙ্গে নজরুলের ভিন্নতা ও স্বাতন্ত্র্য ব্যাখ্যা করেন।

বাংলা একাডেমির সভাপতি আবুল কাসেম ফজলুল হক নজরুল পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ করতে তাঁদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ শুরুর পর থেকে আমাদের সাহিত্য বৈশ্বিক দক্ষিণের সবচেয়ে সমৃদ্ধ সাহিত্যে পরিণত হয়েছে। কিন্তু জাতিগত হীনম্মন্যতা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রগতির অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি জাতীয় আত্মবোধে থাকা হীনম্মন্যতা দূর করতে নজরুলের সাহিত্যচিন্তাকে দলীয় বা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করে সবাইকে বাস্তব প্রেক্ষাপটে অধ্যয়ন করার আহ্বান জানান।

সেমিনার শেষে নুর হোসেন রানার নির্দেশনায় ‘দেখব এবার জগৎটাকে’ শিরোনামের একটি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।
তথ্যসূত্র:বাসস