ঢাকা 11:50 am, Tuesday, 17 June 2025

বিদ্যমান জাপানি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে আরও সম্প্রসারণে আগ্রহী : জেট্রো

  • Reporter Name
  • Update Time : 11:52:33 pm, Tuesday, 20 May 2025
  • 10 Time View

জাপান বৈদেশিক বাণিজ্য সংস্থার (জেট্রো) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বিদ্যমান বেশিরভাগ জাপানি কোম্পানি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিবেচনা করে এখানে তাদের ব্যবসা আরো সম্প্রসারণ করতে চায়।

জেট্রো-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউজি আন্দো নগরীর জেট্রো অফিসে এক সাক্ষাৎকারে বাসসকে বলেন, “রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরেও বাংলাদেশে ব্যবসার বিপুল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আগামী ১-২ বছরে ব্যবসায়িক উন্নয়নের প্রবণতা বিবেচনা করে, ৫৭.৭ শতাংশ জাপানি কোম্পানি ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী।”

আন্দো বলেন, বর্তমানে মোট ৩১৫টি জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে।
তিনি আরও বলেন, “গত নয় মাসে, প্রায় ৯০০ কোম্পানি বিনিয়োগ সম্পর্কিত তথ্য নেওয়ার জন্য আমাদের অফিসে এসেছিল। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই জাপানি কোম্পানি। তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ নতুন কোম্পানি যারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। তাদের মধ্যে কিছু কোম্পানি ইতোমধ্যে এখানে বিনিয়োগ করেছে।”

আন্দো বলেন, জাপানি কোম্পানিগুলি রপ্তানিমুখী ব্যবসা এবং দেশীয় বাজারমুখী ব্যবসায়িক সুযোগ খোঁজে।

তিনি বলেন, ফাস্ট মুভিং ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি), মোটরগাড়ি ও যন্ত্রাংশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং পরিষেবা খাত হচ্ছে জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য দেশীয় বাজারমুখী কোম্পানি স্থাপনের সম্ভাব্য ক্ষেত্র।
তিনি আরও বলেন, মানবসৃষ্ট ফাইবার, টেক্সটাইল রাসায়নিক, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, আইটি এবং আইটিইএস খাতও বাংলাদেশে রপ্তানিমুখী শিল্প স্থাপনের জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্র।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাপানি উদ্যোক্তাদের জন্য অন্যতম প্রধান গন্তব্য। তারা প্রতিযোগিতামূলক মানবসম্পদ এবং বিশাল দেশীয় বাজারের সুযোগ নিয়ে তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, আইটি এবং অবকাঠামো সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছে।

তিনি আরও বলেন, তারা দেশের উৎপাদন, এফএমসিজি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ভিত্তিক স্টার্টআপ কোম্পানিগুলিতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
আন্দো বলেন, ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল স্বচ্ছতা, নীতিগত ধারাবাহিকতা এবং ব্যবসায়িক পরিবেশে আন্তর্জাতিক মান।

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে বিদ্যমান জাপানি কোম্পানিগুলিকে সাফল্য এনে দিলে এফডিআই বাড়াতে বাংলাদেশের সাফল্য আসবে। ব্যবসায়ে নিরন্তর প্রচেষ্টা ও সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি বলেন, অনেক জাপানি অবকাঠামো উন্নয়ন কোম্পানি মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর সহ জাপানি অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স (ওডিএ) প্রকল্পে বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে।

সম্প্রতি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) বঙ্গোপসাগরে দেশের একমাত্র গভীর সমুদ্র বন্দর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়নের জন্য দুটি জাপানি সংস্থার সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
জেট্রোর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ অবকাঠামো এবং কর আরোপের উলে¬খ করে বলেছেন, জাপানি কোম্পানি এবং বাংলাদেশে অন্যান্য বিদেশী কোম্পানির জন্য এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

তিনি জটিল কর ব্যবস্থা পর্যালোচনার পাশাপাশি বিশেষ করে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ও নিবন্ধনসহ সরল, দ্রুত ও এবং স্বচ্ছ প্রশাসনিক পদ্ধতি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে জাপান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উলে¬খযোগ্য অবদান রেখে আসছে এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক দিন দিন আরও শক্তিশালী ও উৎপাদনশীল হচ্ছে।

তিনি বলেন, আরও জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য, এখানে প্রবাসীদের জন্য ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিটের মানদণ্ড ও প্রক্রিয়া সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধির জন্য নীতিগত ধারাবাহিকতার উপর জোর দেন।

জাপান ও বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং পারস্পরিক সফরের মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। বাংলাদেশের একটি প্রধান উন্নয়ন অংশীদার জাপান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রচেষ্টায় সহায়তা প্রদান করে আসছে।
তথ্যসূত্র:বাসস

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পাঠক প্রিয়

বিদ্যমান জাপানি ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে আরও সম্প্রসারণে আগ্রহী : জেট্রো

Update Time : 11:52:33 pm, Tuesday, 20 May 2025

জাপান বৈদেশিক বাণিজ্য সংস্থার (জেট্রো) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বিদ্যমান বেশিরভাগ জাপানি কোম্পানি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিবেচনা করে এখানে তাদের ব্যবসা আরো সম্প্রসারণ করতে চায়।

জেট্রো-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউজি আন্দো নগরীর জেট্রো অফিসে এক সাক্ষাৎকারে বাসসকে বলেন, “রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরেও বাংলাদেশে ব্যবসার বিপুল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আগামী ১-২ বছরে ব্যবসায়িক উন্নয়নের প্রবণতা বিবেচনা করে, ৫৭.৭ শতাংশ জাপানি কোম্পানি ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী।”

আন্দো বলেন, বর্তমানে মোট ৩১৫টি জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে।
তিনি আরও বলেন, “গত নয় মাসে, প্রায় ৯০০ কোম্পানি বিনিয়োগ সম্পর্কিত তথ্য নেওয়ার জন্য আমাদের অফিসে এসেছিল। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই জাপানি কোম্পানি। তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ নতুন কোম্পানি যারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। তাদের মধ্যে কিছু কোম্পানি ইতোমধ্যে এখানে বিনিয়োগ করেছে।”

আন্দো বলেন, জাপানি কোম্পানিগুলি রপ্তানিমুখী ব্যবসা এবং দেশীয় বাজারমুখী ব্যবসায়িক সুযোগ খোঁজে।

তিনি বলেন, ফাস্ট মুভিং ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি), মোটরগাড়ি ও যন্ত্রাংশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং পরিষেবা খাত হচ্ছে জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য দেশীয় বাজারমুখী কোম্পানি স্থাপনের সম্ভাব্য ক্ষেত্র।
তিনি আরও বলেন, মানবসৃষ্ট ফাইবার, টেক্সটাইল রাসায়নিক, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, আইটি এবং আইটিইএস খাতও বাংলাদেশে রপ্তানিমুখী শিল্প স্থাপনের জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্র।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাপানি উদ্যোক্তাদের জন্য অন্যতম প্রধান গন্তব্য। তারা প্রতিযোগিতামূলক মানবসম্পদ এবং বিশাল দেশীয় বাজারের সুযোগ নিয়ে তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, আইটি এবং অবকাঠামো সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছে।

তিনি আরও বলেন, তারা দেশের উৎপাদন, এফএমসিজি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ভিত্তিক স্টার্টআপ কোম্পানিগুলিতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
আন্দো বলেন, ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল স্বচ্ছতা, নীতিগত ধারাবাহিকতা এবং ব্যবসায়িক পরিবেশে আন্তর্জাতিক মান।

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে বিদ্যমান জাপানি কোম্পানিগুলিকে সাফল্য এনে দিলে এফডিআই বাড়াতে বাংলাদেশের সাফল্য আসবে। ব্যবসায়ে নিরন্তর প্রচেষ্টা ও সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি বলেন, অনেক জাপানি অবকাঠামো উন্নয়ন কোম্পানি মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর সহ জাপানি অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স (ওডিএ) প্রকল্পে বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে।

সম্প্রতি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) বঙ্গোপসাগরে দেশের একমাত্র গভীর সমুদ্র বন্দর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়নের জন্য দুটি জাপানি সংস্থার সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
জেট্রোর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ অবকাঠামো এবং কর আরোপের উলে¬খ করে বলেছেন, জাপানি কোম্পানি এবং বাংলাদেশে অন্যান্য বিদেশী কোম্পানির জন্য এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

তিনি জটিল কর ব্যবস্থা পর্যালোচনার পাশাপাশি বিশেষ করে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ও নিবন্ধনসহ সরল, দ্রুত ও এবং স্বচ্ছ প্রশাসনিক পদ্ধতি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে জাপান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উলে¬খযোগ্য অবদান রেখে আসছে এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক দিন দিন আরও শক্তিশালী ও উৎপাদনশীল হচ্ছে।

তিনি বলেন, আরও জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য, এখানে প্রবাসীদের জন্য ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিটের মানদণ্ড ও প্রক্রিয়া সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধির জন্য নীতিগত ধারাবাহিকতার উপর জোর দেন।

জাপান ও বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং পারস্পরিক সফরের মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। বাংলাদেশের একটি প্রধান উন্নয়ন অংশীদার জাপান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রচেষ্টায় সহায়তা প্রদান করে আসছে।
তথ্যসূত্র:বাসস