ঢাকা 12:02 am, Sunday, 4 May 2025

দ্রুজদের ঘিরে উত্তেজনার মাঝে সিরিয়ায় ইসরাইলের নতুন হামলা

  • Reporter Name
  • Update Time : 08:42:46 pm, Saturday, 3 May 2025
  • 2 Time View

সিরিয়ার দ্রুজদের ঘিরে সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যে শুক্রবার রাতে সিরিয়ার ভেতরে অন্তত ২০টির বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। একটি হামলা চালানো হয় রাজধানী দামেস্কের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদের কাছাকাছি। সিরিয়ার ইসলামপন্থী শাসকগোষ্ঠী এটিকে ‘বিপজ্জনক উসকানি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

দামেস্ক থেকে এএফপি জানায়, দ্রুজ সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ইসরাইল পূর্বেই দামেস্ক সরকারকে হুঁশিয়ার করেছিল। এর মধ্যেই এই হামলা চালানো হলো।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, সিরিয়ায় ইসরাইলের এটাই ছিল এ বছরের ‘সবচেয়ে ভারী’ হামলা, যার আওতায় অন্তত ২০টির বেশি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে আঘাত হানা হয়।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানায়, দামেস্ক ছাড়াও পশ্চিমাঞ্চলীয় লাতাকিয়া ও হামা এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় দারা শহরে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। হামলায় দামেস্কের কাছে হারাস্তায় এক বেসামরিক নিহত এবং হামার কাছে চারজন আহত হন।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, তাদের বাহিনী ‘সিরিয়ায় একটি সামরিক স্থাপনা, অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট কামান ও ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার উপর হামলা’ চালিয়েছে। তবে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
এই হামলার আগে দামেস্কের কাছে জারামানা ও সানায়া এলাকায় এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় সুইদা প্রদেশে সিরিয়া সরকারের অনুগত বাহিনী ও দ্রুজ যোদ্ধাদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের পর দ্রুজ ধর্মীয় নেতা ও সশস্ত্র দলগুলো দামেস্ক সরকারের প্রতি আনুগত্য পুনর্ব্যক্ত করে।

অবজারভেটরি জানায়, এসব সংঘর্ষে ১০০’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। সুইদা, যা দ্রুজ সম্প্রদায়ের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, সেখানে শুক্রবার একটি খামারে ড্রোন হামলায় চার দ্রুজ যোদ্ধা নিহত হন। সানা জানায়, এটি ইসরাইলের চালানো হামলা।

বার্তা’ পাঠাল ইসরাইল

শুক্রবার ভোরে দামেস্কে প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদের কাছে বিস্ফোরণ ঘটে, যার শব্দ গোটা শহরে শোনা যায়। ঘটনাটি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগও তৈরি হয়।

ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচাই আদ্রাঈ জানান, ‘যুদ্ধবিমান থেকে দামেস্কে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ হুসেইন আল-শারার প্রাসাদের কাছে হামলা চালানো হয়।’

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, এটি ‘সিরিয়ার শাসকদের প্রতি একটি পরিষ্কার বার্তা’। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দীর্ঘ সময়ের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশটি এখন নতুন ইসলামপন্থী শাসকদের অধীনে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দামেস্কের দক্ষিণে কোনো বাহিনী মোতায়েন করা বা দ্রুজ জনগোষ্ঠীর প্রতি যেকোনো হুমকি আমরা মেনে নেব না।’

সিরিয়ার প্রেসিডেন্সি এই হামলাকে ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিপজ্জনক উসকানি’ বলে অভিহিত করেছে এবং দেশটিকে অস্থিতিশীল করার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ হামলাকে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন ‘গোত্রীয় উত্তেজনাসম্পন্ন প্রাণঘাতী সংঘর্ষ’ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, ইসরাইলি হামলা সাধারণ নাগরিকদের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে।
এ সপ্তাহের সংঘর্ষের পর দ্রুজ প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক সমঝোতায় উপনীত হয় সরকার, যার আওতায় সানায়ায় সেনা মোতায়েন এবং জারামানায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সরকারি সূত্র জানায়, এই চুক্তির অংশ হিসেবে দ্রুজদের কাছ থেকে ভারী অস্ত্র হস্তান্তরের শর্তও ছিল।

এএফপির এক আলোকচিত্রী জারামানায় দ্রুজ বন্দুকধারীদের কাছ থেকে চেকপয়েন্ট দখল করে নিতে সরকারি সেনাদের দেখা গেছে, যদিও অস্ত্র হস্তান্তরের দৃশ্য দেখা যায়নি।

‘আইনের বাইরে থাকা গোষ্ঠী’

ইসরায়েলের ‘আগ্রাসনের’ নিন্দা জানিয়েছে সিরিয়ার নতুন শাসকদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক কাতার এবং সৌদি আরব। জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “সিরিয়াকে যেন আঞ্চলিক উত্তেজনার ক্ষেত্র বানানো না হয়।’
ইসরাইল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ইসলামপন্থীদের মাধ্যমে আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে শত শত সামরিক স্থানে হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে দেশটি গোলান মালভূমিতে ইসরাইলি ও সিরীয় বাহিনীর মধ্যকার পূর্বতন নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চলেও সেনা মোতায়েন করেছে।

গত বুধবারও দামেস্কে হামলা চালায় ইসরায়েল এবং দ্রুজদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অব্যাহত থাকলে আরও হামলার হুমকি দেয়।

এই অস্থিরতা শুরু হয় একটি অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ার পর, যেখানে এক দ্রুজ ব্যক্তির কথিত ধর্ম—অবমাননাকর বক্তব্য রয়েছে, যার সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি এএফপি।

সিরিয়া সরকার জানিয়েছে, ‘আইনের বাইরে থাকা গোষ্ঠী’ এই সহিংসতার জন্য দায়ী। তবে অবজারভেটরি ও দ্রুজ বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সরকারপন্থী বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিই জারামানা ও সানায়ায় হামলা চালিয়েছে এবং দ্রুজ যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।

‘গণহত্যামূলক অভিযানের’ অভিযোগ

সুইদায় এক বৈঠকে ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ ও সামরিক গোষ্ঠীগুলো এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ‘অবিভাজ্য সিরীয় মাতৃভূমির অংশ’ এবং ‘বিভাজন, বিচ্ছিন্নতা বা স্বাধীনতার’ বিরুদ্ধে।
সানা জানিয়েছে, সুয়াইদায় নিরাপত্তা রক্ষায় সেখানে সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সিরিয়ার শীর্ষ দ্রুজ ধর্মীয় নেতা শেখ হিকমাত আল-হিজরি এই সহিংসতাকে তার জনগণের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যামূলক অভিযান’ হিসেবে আখ্যা দেন।

সিরিয়ার নতুন শাসকদের উত্থান আল-কায়েদার মতো জিহাদিবাদী নেটওয়ার্ক থেকে হলেও তারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু কট্টর ইসলামপন্থীদের চাপ মোকাবিলাও তাদের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

শুক্রবার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট শারার সঙ্গে বৈঠক করেন লেবাননের দ্রুজ নেতা ও রাজনৈতিক প্রবীণ ওয়ালিদ জুমব্লাট। তিনি সিরিয়ার দ্রুজদের প্রতি ‘ইসরাইলি হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যানের’ আহ্বান জানান।
সাম্প্রতিক সহিংসতা আরও এক দফা জাতিগত হত্যাযজ্ঞের আবহ তৈরি করেছে। মার্চ মাসে আলাভি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে চালানো অভিযানে নিরাপত্তাবাহিনী ও তাদের মিত্রদের হাতে ১,৭০০’র বেশি বেসামরিক নিহত হন বলে জানায় অবজারভেটরি।

বাশার আল-আসাদ নিজেও আলাউই সম্প্রদায়ের। সরকার বলছে, ওই সহিংসতা উসকে দিয়েছিল তার অনুগত একটি গোষ্ঠী।
তথ্যসূত্র:বাসস

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পাঠক প্রিয়

দ্রুজদের ঘিরে উত্তেজনার মাঝে সিরিয়ায় ইসরাইলের নতুন হামলা

Update Time : 08:42:46 pm, Saturday, 3 May 2025

সিরিয়ার দ্রুজদের ঘিরে সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যে শুক্রবার রাতে সিরিয়ার ভেতরে অন্তত ২০টির বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। একটি হামলা চালানো হয় রাজধানী দামেস্কের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদের কাছাকাছি। সিরিয়ার ইসলামপন্থী শাসকগোষ্ঠী এটিকে ‘বিপজ্জনক উসকানি’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

দামেস্ক থেকে এএফপি জানায়, দ্রুজ সম্প্রদায়ের ওপর হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ইসরাইল পূর্বেই দামেস্ক সরকারকে হুঁশিয়ার করেছিল। এর মধ্যেই এই হামলা চালানো হলো।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, সিরিয়ায় ইসরাইলের এটাই ছিল এ বছরের ‘সবচেয়ে ভারী’ হামলা, যার আওতায় অন্তত ২০টির বেশি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে আঘাত হানা হয়।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানায়, দামেস্ক ছাড়াও পশ্চিমাঞ্চলীয় লাতাকিয়া ও হামা এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় দারা শহরে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। হামলায় দামেস্কের কাছে হারাস্তায় এক বেসামরিক নিহত এবং হামার কাছে চারজন আহত হন।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, তাদের বাহিনী ‘সিরিয়ায় একটি সামরিক স্থাপনা, অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট কামান ও ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার উপর হামলা’ চালিয়েছে। তবে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
এই হামলার আগে দামেস্কের কাছে জারামানা ও সানায়া এলাকায় এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় সুইদা প্রদেশে সিরিয়া সরকারের অনুগত বাহিনী ও দ্রুজ যোদ্ধাদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের পর দ্রুজ ধর্মীয় নেতা ও সশস্ত্র দলগুলো দামেস্ক সরকারের প্রতি আনুগত্য পুনর্ব্যক্ত করে।

অবজারভেটরি জানায়, এসব সংঘর্ষে ১০০’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। সুইদা, যা দ্রুজ সম্প্রদায়ের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, সেখানে শুক্রবার একটি খামারে ড্রোন হামলায় চার দ্রুজ যোদ্ধা নিহত হন। সানা জানায়, এটি ইসরাইলের চালানো হামলা।

বার্তা’ পাঠাল ইসরাইল

শুক্রবার ভোরে দামেস্কে প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদের কাছে বিস্ফোরণ ঘটে, যার শব্দ গোটা শহরে শোনা যায়। ঘটনাটি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগও তৈরি হয়।

ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচাই আদ্রাঈ জানান, ‘যুদ্ধবিমান থেকে দামেস্কে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ হুসেইন আল-শারার প্রাসাদের কাছে হামলা চালানো হয়।’

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, এটি ‘সিরিয়ার শাসকদের প্রতি একটি পরিষ্কার বার্তা’। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দীর্ঘ সময়ের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশটি এখন নতুন ইসলামপন্থী শাসকদের অধীনে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দামেস্কের দক্ষিণে কোনো বাহিনী মোতায়েন করা বা দ্রুজ জনগোষ্ঠীর প্রতি যেকোনো হুমকি আমরা মেনে নেব না।’

সিরিয়ার প্রেসিডেন্সি এই হামলাকে ‘রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিপজ্জনক উসকানি’ বলে অভিহিত করেছে এবং দেশটিকে অস্থিতিশীল করার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ হামলাকে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন ‘গোত্রীয় উত্তেজনাসম্পন্ন প্রাণঘাতী সংঘর্ষ’ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, ইসরাইলি হামলা সাধারণ নাগরিকদের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে।
এ সপ্তাহের সংঘর্ষের পর দ্রুজ প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক সমঝোতায় উপনীত হয় সরকার, যার আওতায় সানায়ায় সেনা মোতায়েন এবং জারামানায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সরকারি সূত্র জানায়, এই চুক্তির অংশ হিসেবে দ্রুজদের কাছ থেকে ভারী অস্ত্র হস্তান্তরের শর্তও ছিল।

এএফপির এক আলোকচিত্রী জারামানায় দ্রুজ বন্দুকধারীদের কাছ থেকে চেকপয়েন্ট দখল করে নিতে সরকারি সেনাদের দেখা গেছে, যদিও অস্ত্র হস্তান্তরের দৃশ্য দেখা যায়নি।

‘আইনের বাইরে থাকা গোষ্ঠী’

ইসরায়েলের ‘আগ্রাসনের’ নিন্দা জানিয়েছে সিরিয়ার নতুন শাসকদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক কাতার এবং সৌদি আরব। জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “সিরিয়াকে যেন আঞ্চলিক উত্তেজনার ক্ষেত্র বানানো না হয়।’
ইসরাইল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ইসলামপন্থীদের মাধ্যমে আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে শত শত সামরিক স্থানে হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে দেশটি গোলান মালভূমিতে ইসরাইলি ও সিরীয় বাহিনীর মধ্যকার পূর্বতন নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চলেও সেনা মোতায়েন করেছে।

গত বুধবারও দামেস্কে হামলা চালায় ইসরায়েল এবং দ্রুজদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অব্যাহত থাকলে আরও হামলার হুমকি দেয়।

এই অস্থিরতা শুরু হয় একটি অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ার পর, যেখানে এক দ্রুজ ব্যক্তির কথিত ধর্ম—অবমাননাকর বক্তব্য রয়েছে, যার সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি এএফপি।

সিরিয়া সরকার জানিয়েছে, ‘আইনের বাইরে থাকা গোষ্ঠী’ এই সহিংসতার জন্য দায়ী। তবে অবজারভেটরি ও দ্রুজ বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সরকারপন্থী বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিই জারামানা ও সানায়ায় হামলা চালিয়েছে এবং দ্রুজ যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।

‘গণহত্যামূলক অভিযানের’ অভিযোগ

সুইদায় এক বৈঠকে ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ ও সামরিক গোষ্ঠীগুলো এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ‘অবিভাজ্য সিরীয় মাতৃভূমির অংশ’ এবং ‘বিভাজন, বিচ্ছিন্নতা বা স্বাধীনতার’ বিরুদ্ধে।
সানা জানিয়েছে, সুয়াইদায় নিরাপত্তা রক্ষায় সেখানে সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সিরিয়ার শীর্ষ দ্রুজ ধর্মীয় নেতা শেখ হিকমাত আল-হিজরি এই সহিংসতাকে তার জনগণের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যামূলক অভিযান’ হিসেবে আখ্যা দেন।

সিরিয়ার নতুন শাসকদের উত্থান আল-কায়েদার মতো জিহাদিবাদী নেটওয়ার্ক থেকে হলেও তারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু কট্টর ইসলামপন্থীদের চাপ মোকাবিলাও তাদের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

শুক্রবার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট শারার সঙ্গে বৈঠক করেন লেবাননের দ্রুজ নেতা ও রাজনৈতিক প্রবীণ ওয়ালিদ জুমব্লাট। তিনি সিরিয়ার দ্রুজদের প্রতি ‘ইসরাইলি হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যানের’ আহ্বান জানান।
সাম্প্রতিক সহিংসতা আরও এক দফা জাতিগত হত্যাযজ্ঞের আবহ তৈরি করেছে। মার্চ মাসে আলাভি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে চালানো অভিযানে নিরাপত্তাবাহিনী ও তাদের মিত্রদের হাতে ১,৭০০’র বেশি বেসামরিক নিহত হন বলে জানায় অবজারভেটরি।

বাশার আল-আসাদ নিজেও আলাউই সম্প্রদায়ের। সরকার বলছে, ওই সহিংসতা উসকে দিয়েছিল তার অনুগত একটি গোষ্ঠী।
তথ্যসূত্র:বাসস