নিজের ও স্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সস্ত্রীক সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখান থেকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ত্রীকে নিয়ে একটি আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন তিনি। তাঁর পরিবারের জন্য স্ত্রীর অসাধারণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি এই পোস্টে মির্জা ফখরুল বলেছেন, আজ সিঙ্গাপুরে তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসক জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত সবকিছু ভালো দেখা যাচ্ছে। তবে ছয় মাস পর তাঁদের আবার যেতে হবে। দোয়া ও শুভকামনার জন্য তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন।
স্বাস্থ্য পরীক্ষার উদ্দেশ্যে গত ৬ এপ্রিল স্ত্রী রাহাত আরা বেগমকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে গেছেন বিএনপির মহাসচিব। সেখানে থেকেই আজ বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ইংরেজি ভাষায় তিনি এই পোস্ট দেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরুতে মির্জা ফখরুলের স্ত্রীর গুরুতর একটি রোগ শনাক্ত হয়। ওই বছর ১০ ডিসেম্বর তাঁর অস্ত্রোপচারের নির্ধারিত দিন ছিল। এর দুই দিন আগে মধ্যরাতে বাসা থেকে আটক হওয়ার কথা স্ট্যাটাসে আবেগঘন ভাষায় তুলে ধরেছেন মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে যখন আমার স্ত্রীর অসুখ ধরা পড়ে, তখন আমার পৃথিবীটা এক মুহূর্তে থেমে গিয়েছিল। তিনি আমাদের পরিবারের মূল স্তম্ভ বা ভরসা। এই পরিস্থিতিতে আমি যত দ্রুত সম্ভব তাঁর অস্ত্রোপচার করানোর সিদ্ধান্ত নিই। তাঁর অস্ত্রোপচারের আগের দিন রাত তিনটায় আমাকে আমার নিজ বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় আওয়ামী পুলিশ। আমার মেয়ে ঢাকায় ছুটে আসে। যখন আমার স্ত্রীর শরীরে অস্ত্রোপচার চলছিল, তখন আমি ছিলাম কারাগারে। আমার কন্যারা এবং চিকিৎসক জাহিদ (বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন) ছাড়া আর কেউ তখন হাসপাতালে ছিলেন না। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান) ও আমার ভাইবোনেরা ফোনে খোঁজখবর রাখছিলেন।’
বিএনপির মহাসচিব আরও লেখেন, ‘আমার স্ত্রী সবকিছু অসীম ধৈর্য ও হাসিমুখে মোকাবিলা করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চলা জটিল চিকিৎসার বিষয়টিই শুধু সহ্য করেননি, একই সঙ্গে প্রায় ৫০ বছর ধরে আমাদের পারিবারিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আজ (১০ এপ্রিল) সিঙ্গাপুরে তাঁর চিকিৎসক জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত সবকিছু ভালো দেখা যাচ্ছে। তবে ছয় মাস পর আমাদের আবার যেতে হবে। আপনাদের দোয়া ও শুভকামনার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’
৩২ দিন কারাভোগের পর ২০২৩ সালের ৯ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
৩২ দিন কারাভোগের পর ২০২৩ সালের ৯ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরছবি: সাজিদ হোসেন
কারাগারে ছিলেন ৩২ দিন
মির্জা ফখরুল তাঁর এই পোস্টে গ্রেপ্তার হওয়ার যে ঘটনা উল্লেখ করেছেন, সেটি নিয়ে গত বছরের ২ ডিসেম্বর তাঁর মেয়ে শামারুহ মির্জাও একটি আবেগঘন পোস্ট দিয়েছিলেন। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় ছিল বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। তার আগে পুলিশ বিশেষ অভিযান শুরু করে। ঢাকায় প্রবেশমুখে করা হয় তল্লাশি। গণহারে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের। ৮ ডিসেম্বর প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া বিশেষ অভিযানের প্রথম চার দিনে ৩ হাজার ৮৯৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে আর তথ্য দেওয়া হয়নি।
সেই পরিস্থিতিতে ৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসায় পৃথক অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। দুজনকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে। প্রথমে ডিবি তাঁদের আটক বা গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেনি। বলা হয়, ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ নিয়ে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বাসা থেকে তুলে নেওয়ার প্রায় ১১ ঘণ্টা পর বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তারের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে ডিবি। ৮ ডিসেম্বর পল্টন থানায় হওয়া এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরদিন তাঁদের দুজনকে আদালতে নেওয়া হয়। ওই মামলায় নয়াপল্টনে (৭ ডিসেম্বর) পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় উসকানিদাতা হিসেবে ফখরুল ও আব্বাসকে অভিযুক্ত করা হয়।
আদালত তাঁদের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর তাঁদের কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ৩২ দিন কারাভোগের পর ২০২৩ সালের ৯ জানুয়ারি তাঁরা ওই মামলায় জামিনে মুক্ত হন।