এবার বইমেলায় এসে কোথায় যেন একটু প্রাণের ঘাটতি মনে হচ্ছিল কবি-নাট্যকার শুভাশিস সিনহার।
তার ভাষ্য, “মেলায় নান্দনিক সাজ আছে, কিন্তু বইকে ঘিরে কোনো উন্মাদনা নেই। অথচ বইমেলায় সবচেয়ে বেশি আলোচনা হওয়া উচিত বই নিয়েই।”
মৌলভীবাজারের ঘোড়ামারা গ্রামে বাস করেন এই সাহিত্যিক। এবছর নাটক বিভাগে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।
পুরস্কার নিতে বইমেলার উদ্বোধনের দিনে এসেছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুভাশিস সিনহাকে পাওয়া গেল মেলা প্রাঙ্গণে।
তিনি বলেন, “বই নিয়ে এবার ফেইসবুকেও প্রচারণা কম। অন্যান্য বছর ফেইসবুকে লেখকদের অনেক পোস্ট চোখে পড়ত। সেখান থেকে একটা ধারণা পাওয়া যেত। এবার বই নিয়ে লেখকেরা কেমন যেন নীরব। উন্মাদনা নেই, উচ্ছ্বাস নেই।”
এ সময় তার পাশে ছিলেন তরুণ চিত্রশিল্পী শাহনাজ জাহান। তার ভাষ্য, “রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই কোনো কোনো লেখক এবার বই নিয়ে পোস্ট করতে গেলেও অস্বস্তিবোধ করছেন।”
বৃহস্পতিবার ছিল বইমেলার ২৭তম দিন। একদিন পরই পর্দা নামবে মাসব্যাপী এই মেলার। শুক্রবার বিকেল ৫টায় সমাপনী আয়োজনে বইমেলার প্রতিবেদন প্রকাশ করবে মেলা পরিচালনা কমিটি।
এর আগের দিন মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি এবং বিভিন্ন প্রকাশনা সংশ্লিষ্টদের আলাপকালে অনেকেই তাদের হতাশার তথ্য দিয়েছেন। মেলার কিছু পরিসংখ্যানও বলছে, এবার বই প্রকাশের সংখ্যা কমেছে। আর বিক্রি নিয়েও হতাশার কথা বলেছেন প্রকাশকরা।
যদিও বইমেলায় কত টাকা বিক্রি হয়েছে, সেটির সঠিক পরিসংখ্যান জানার কোনো সুযোগ নেই। কারণ অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকেই বিক্রির তথ্য প্রকাশ্যে আনা হয় না।
স্বপ্ন ৭১ এর প্রকাশক আবু সাঈদ বলেন, “এবারের মেলায় গতবারের চেয়ে অন্তত ৩০/৪০ শতাংশ বিক্রি কম।”
বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়ন থেকে ২০২৪ সালে মেলায় ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার বই বিক্রির তথ্য দেওয়া হয়েছিল। এর আগের বছর তা ছিল ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকার বই৷
এবার বাংলা একাডেমির স্টল থেকে কত টাকার বই বিক্রি হল, তা জানা যাবে মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে।
তবে একাডেমির বিপণন সংশ্লিষ্ট একাধিক সদস্য বলেন, এবার বিক্রি এক কোটি টাকা ছাড়াবে কি না, তারা সন্দিহান।
বইমেলায় ২০২৪ সালে নতুন বই প্রকাশের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭৫১টি। এর আগের বছর প্রকাশ হয়েছিল ৩ হাজার ৭৩০টি।
এবারের বইমেলায় বৃহস্পতিবার ২৭তম দিন পর্যন্ত নতুন বই প্রকাশের সংখ্যা ২ হাজার ৯৬৪টি। ফলে এবারের মেলায় অন্তত ৫ শতাধিক কম বই প্রকাশ হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলানামার প্রকাশক হোসেন শহীদ মজনু বলেন, সাধারণত শুক্র, শনিবার এবং পয়লা ফাল্গুন ও একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভালো বিক্রি হয়। এবার তেমনটা হয়নি। এ দুই দিন শুক্রবার হওয়ায় দুইটা ছুটির দিন পাওয়া যায়নি। একুশে ফেব্রুয়ারির পরও বিক্রি সন্তোষজনক নয়।
বইমেলার ব্যবস্থাপনা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বাবুই এর প্রকাশক কাদের বাবু বলেন, “বইমেলায় বই থাকা উচিত। কিন্তু এটা খাবারের মেলা হয়ে যাচ্ছে। এত খাবারের দোকান বইমেলায় থাকা উচিত নয়।”
বৃহস্পতিবার মেলায় নতুন বই এসেছে ১৭৬টি।
আলোচনা, গান ও কবিতা
বৃহস্পতিবার লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি সায়ীদ আবুবকর, কবি মিতা আলী এবং কবি ও শিশুসাহিত্যিক জামসেদ ওয়াজেদ।
বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘একটি অভ্যুত্থানের জন্ম ও আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রেজাউল করিম রনি। আলোচনায় অংশ নেন সৈয়দ নিজার। সভাপতিত্ব করেন কাজী মারুফ।
সাংস্কৃতিক পর্বে কবিতা পাঠ করেন মনজুর রহমান, রফিক হাসান, জান্নাতুল ফেরদৌসী, শোয়াইব আহমদ, ফেরদৌস আরা রুমী, নাইমা হোসেন, ড. নাইমা খানম, এনামুল হক জুয়েল ও আমিরুল মুমিনিন মানিক।
এছাড়া ছিল মিজানুর রহমানের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘লেমন নৃত্যকলা একাডেমি’ এর পরিবেশনা।
সংগীত পরিবেশন করেন ছন্দা চক্রবর্তী, ইমরান খন্দকার, নাসরিন বেগম, আফসানা রুনা, মো. আনিসুজ্জামান, সুষ্মিতা সেন চৌধুরী, আফরিদা জাহিন জয়িতা, শাহীন আলম, ডলি মণ্ডল, শফি উদ্দিন ও দিতি সরকার।
যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন শিমুল বড়ুয়া (তবলা), রাজিব আহমেদ (কি বোর্ড), মো. মেজবাহ উদ্দিন (অক্টোপ্যাড), সাইদ হাসান ফারুকী (লিড গিটার) এবং পল্লব দাস (বেইজ গিটার)।
সমাপনী দিন যা থাকছে
শুক্রবার বইমেলার সমাপনী দিন। মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর।
সমাপনী অনুষ্ঠানে কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪, চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হবে।
সূত্র: বিডিনিউজ