ঢাকা 3:32 am, Friday, 20 June 2025
শিরোনাম
৫ আগস্ট সরকারি ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত ডিবির হারুনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাহাঙ্গীরের প্লট ক্রোকের আদেশ নতুন আরো তিন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে ব্রি যশোরে করোনায় ২ জনের মৃত্যু র‌্যাব পরিচয়ে কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় আটক ৫ হলি আর্টিজান হামলা : মৃত্যুদণ্ড থেকে সাত আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ডের যুক্তি পূর্ণাঙ্গ রায়ে শেখ হাসিনার আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে : গুম কমিশন সভাপতি পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করতে এসএসএফ সদস্যদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান লিবিয়া থেকে ১৫৮ বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে

নতুন দলের ঘোষণা হতে পারে ২৬ ফেব্রুয়ারি

  • Reporter Name
  • Update Time : 09:08:36 am, Thursday, 20 February 2025
  • 20 Time View

জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে নতুন যে রাজনৈতিক দল আসতে যাচ্ছে, সেই দলের কাঠামো এখনকার মতোই থাকছে। অর্থাৎ এই দুই প্ল্যাটফর্মের বর্তমান যে কাঠামো (আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র), সেটা থাকছে। আহ্বায়ক হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। পরের পদগুলোর জন্য জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখভাগের কয়েকজন নেতার নাম আলোচনায় আছে।

একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, নতুন দলের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের আয়োজনটি হতে পারে ২৬ ফেব্রুয়ারি। ঢাকায় অনুষ্ঠান করে দলের ঘোষণা দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানটি হতে পারে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে।

নতুন দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য নাহিদ ইসলাম যেকোনো সময় সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির দায়িত্বশীল তিন নেতা। গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে তাঁরা জানান, সদস্যসচিব পদে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অধিকাংশ নেতার পছন্দ আখতার হোসেনকে। মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র পদের জন্য আলোচনায় আছেন সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ।

নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে মূলত জাতীয় নাগরিক কমিটি। এ কমিটিতে বিভিন্ন মতাদর্শের লোকজন আছেন। এর মধ্যে তিনটি অংশ স্পষ্ট—১. গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক নেতা; ২. ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা ও ৩. বামধারার বিভিন্ন সংগঠনের সাবেক নেতা ও মধ্যপন্থী নেতারা। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে শিবিরের সাবেক নেতাদের মধ্যে একজন আখতার হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন। শীর্ষ চারটি পদে তাঁদের কাউকে না রাখলে নতুন দলে তাঁরা থাকবেন না বলে জানান। মূলত এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিবিরের সাবেক নেতারা আলী আহসান জোনায়েদের পক্ষে প্রচার শুরু করেন। এর পাশাপাশি এমন প্রচারও চালানো হয় যে শিবিরকে ‘মাইনাস’ করে বামপন্থীদের নিয়ে রাজনীতি করতে চান আখতার।

এ রকম পরিস্থিতিতে শনিবার রাত থেকে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করে। আখতার হোসেনের শুভানুধ্যায়ীরা ফেসবুকে তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট করতে থাকেন। কেউ কেউ লেখেন, আখতারকে ‘মাইনাস’ করার পরিকল্পনা হচ্ছে। ফেসবুকে এমন আলোচনায় এক পক্ষে ছিলেন শিবিরের সাবেক নেতারা, অন্য পক্ষে ছাত্রশক্তি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক নেতাদের পাশাপাশি দেখা গেছে মধ্যপন্থী অনেককে।

শিবিরের সাবেক নেতারা যাঁকে নতুন দলের সদস্যসচিব পদে দেখতে চেয়েছিলেন, সেই জোনায়েদ গত বছরের ২৬ নভেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য হন। এরপর ৯ ডিসেম্বর যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। অন্যদিকে এই পদে নাগরিক কমিটির বড় অংশের পছন্দ আখতার হোসেনকে। তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সমাজসেবা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২৩ সালে ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে বেরিয়ে গিয়ে তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি গঠন করে এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হন। জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির সমন্বয়কেরা মূলত ছাত্রশক্তির নেতা ছিলেন। অভ্যুত্থানের পর গত সেপ্টেম্বরে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠিত হলে আখতারকে এর সদস্যসচিব করা হয়।

সদস্যসচিব পদ ঘিরে এই মতবিরোধের মধ্যে আখতার হোসেনের সমর্থকেরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থান এবং এর আগের বিভিন্ন আন্দোলনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা ফেসবুকে তুলে ধরেন। অন্যদিকে শিবিরের সাবেক নেতারাও আন্দোলনে তাঁদের বিভিন্ন ভূমিকার কথা তুলে ধরতে শুরু করেন ফেসবুকে।

গত রোববার ফেসবুকে এই বিতর্কে যোগ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি শিবিরের সাবেক নেতাদের দিকে ইঙ্গিত করে অভ্যুত্থানের ‘ইতিহাস বিকৃতির’ অভিযোগ তোলেন। একই অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদও।

‘সমঝোতা’

ফেসবুকে এমন বাহাস চলার মধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যালয়ে রোববার ও সোমবার দুই দফায় বৈঠক করেন নেতারা। তবে সেই বৈঠকগুলোতে শিবিরের সাবেক নেতারা যোগ দেননি। অবশ্য সোমবার দুপুর থেকে শিবিরের সাবেক নেতাদের সঙ্গে নাগরিক কমিটির নেতৃস্থানীয়দের সমঝোতার অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই সমঝোতা একটি ‘সমাধানের’ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে গতকাল জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কয়েকজন নেতা। তাঁরা বলেন, সমঝোতা অনুযায়ী আলী আহসান জোনায়েদকে নতুন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব হওয়ার কথা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর।

একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন। অতি সম্প্রতি নতুন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে তাঁর আসা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। তবে এখনো এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

অবশ্য দলের শীর্ষ পর্যায়ে অন্তত একজন নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজনকে দেখতে চাইছে জাতীয় নাগরিক কমিটির একটি অংশ। এ ক্ষেত্রে আলোচনায় রয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন ও যুগ্ম সদস্যসচিব অনিক রায়। সামান্তা শারমিন একসময় রাষ্ট্রচিন্তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আর অনিক রায় বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

আত্মপ্রকাশ কবে, কোথায়

তরুণদের উদ্যোগে নতুন এই দলের আত্মপ্রকাশের আয়োজনের জন্য দুটি জায়গার কথা ভেবেছিল জাতীয় নাগরিক কমিটি। একটি হলো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, অন্যটি ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ। গতকাল রাতে একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানটি হতে পারে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে।

নেতারা জানান, প্রথমে ২৫ ফেব্রুয়ারি দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের কথা ভাবা হয়েছিল; কিন্তু ওই দিন পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বার্ষিকী থাকায় এই দিনে দলের ঘোষণা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি।

দলের আত্মপ্রকাশের আয়োজনের জন্য ইতিমধ্যে একটি প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে জাতীয় নাগরিক কমিটির ৬৮ জন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩০ জন নেতা রয়েছেন। গতকাল বিকেল থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রস্তুতি কমিটির বৈঠক হয়।বৈঠকে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়৷

বৈঠক শেষে জাতীয় নাগরিক কমিটির দুজন নেতা বলেন, বৈঠকে মূলত আয়োজনে বিভিন্ন কাজের জন্য দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পাঠক প্রিয়

নতুন দলের ঘোষণা হতে পারে ২৬ ফেব্রুয়ারি

Update Time : 09:08:36 am, Thursday, 20 February 2025

জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে নতুন যে রাজনৈতিক দল আসতে যাচ্ছে, সেই দলের কাঠামো এখনকার মতোই থাকছে। অর্থাৎ এই দুই প্ল্যাটফর্মের বর্তমান যে কাঠামো (আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র), সেটা থাকছে। আহ্বায়ক হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। পরের পদগুলোর জন্য জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখভাগের কয়েকজন নেতার নাম আলোচনায় আছে।

একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, নতুন দলের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের আয়োজনটি হতে পারে ২৬ ফেব্রুয়ারি। ঢাকায় অনুষ্ঠান করে দলের ঘোষণা দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানটি হতে পারে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে।

নতুন দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য নাহিদ ইসলাম যেকোনো সময় সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির দায়িত্বশীল তিন নেতা। গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে তাঁরা জানান, সদস্যসচিব পদে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অধিকাংশ নেতার পছন্দ আখতার হোসেনকে। মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র পদের জন্য আলোচনায় আছেন সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ।

নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে মূলত জাতীয় নাগরিক কমিটি। এ কমিটিতে বিভিন্ন মতাদর্শের লোকজন আছেন। এর মধ্যে তিনটি অংশ স্পষ্ট—১. গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক নেতা; ২. ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা ও ৩. বামধারার বিভিন্ন সংগঠনের সাবেক নেতা ও মধ্যপন্থী নেতারা। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে শিবিরের সাবেক নেতাদের মধ্যে একজন আখতার হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন। শীর্ষ চারটি পদে তাঁদের কাউকে না রাখলে নতুন দলে তাঁরা থাকবেন না বলে জানান। মূলত এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিবিরের সাবেক নেতারা আলী আহসান জোনায়েদের পক্ষে প্রচার শুরু করেন। এর পাশাপাশি এমন প্রচারও চালানো হয় যে শিবিরকে ‘মাইনাস’ করে বামপন্থীদের নিয়ে রাজনীতি করতে চান আখতার।

এ রকম পরিস্থিতিতে শনিবার রাত থেকে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করে। আখতার হোসেনের শুভানুধ্যায়ীরা ফেসবুকে তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট করতে থাকেন। কেউ কেউ লেখেন, আখতারকে ‘মাইনাস’ করার পরিকল্পনা হচ্ছে। ফেসবুকে এমন আলোচনায় এক পক্ষে ছিলেন শিবিরের সাবেক নেতারা, অন্য পক্ষে ছাত্রশক্তি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক নেতাদের পাশাপাশি দেখা গেছে মধ্যপন্থী অনেককে।

শিবিরের সাবেক নেতারা যাঁকে নতুন দলের সদস্যসচিব পদে দেখতে চেয়েছিলেন, সেই জোনায়েদ গত বছরের ২৬ নভেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য হন। এরপর ৯ ডিসেম্বর যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। অন্যদিকে এই পদে নাগরিক কমিটির বড় অংশের পছন্দ আখতার হোসেনকে। তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সমাজসেবা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২৩ সালে ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে বেরিয়ে গিয়ে তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি গঠন করে এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হন। জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির সমন্বয়কেরা মূলত ছাত্রশক্তির নেতা ছিলেন। অভ্যুত্থানের পর গত সেপ্টেম্বরে জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠিত হলে আখতারকে এর সদস্যসচিব করা হয়।

সদস্যসচিব পদ ঘিরে এই মতবিরোধের মধ্যে আখতার হোসেনের সমর্থকেরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থান এবং এর আগের বিভিন্ন আন্দোলনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা ফেসবুকে তুলে ধরেন। অন্যদিকে শিবিরের সাবেক নেতারাও আন্দোলনে তাঁদের বিভিন্ন ভূমিকার কথা তুলে ধরতে শুরু করেন ফেসবুকে।

গত রোববার ফেসবুকে এই বিতর্কে যোগ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি শিবিরের সাবেক নেতাদের দিকে ইঙ্গিত করে অভ্যুত্থানের ‘ইতিহাস বিকৃতির’ অভিযোগ তোলেন। একই অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদও।

‘সমঝোতা’

ফেসবুকে এমন বাহাস চলার মধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যালয়ে রোববার ও সোমবার দুই দফায় বৈঠক করেন নেতারা। তবে সেই বৈঠকগুলোতে শিবিরের সাবেক নেতারা যোগ দেননি। অবশ্য সোমবার দুপুর থেকে শিবিরের সাবেক নেতাদের সঙ্গে নাগরিক কমিটির নেতৃস্থানীয়দের সমঝোতার অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই সমঝোতা একটি ‘সমাধানের’ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে গতকাল জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কয়েকজন নেতা। তাঁরা বলেন, সমঝোতা অনুযায়ী আলী আহসান জোনায়েদকে নতুন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক করার কথা রয়েছে। এ ছাড়া জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব হওয়ার কথা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর।

একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন। অতি সম্প্রতি নতুন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে তাঁর আসা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। তবে এখনো এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

অবশ্য দলের শীর্ষ পর্যায়ে অন্তত একজন নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজনকে দেখতে চাইছে জাতীয় নাগরিক কমিটির একটি অংশ। এ ক্ষেত্রে আলোচনায় রয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন ও যুগ্ম সদস্যসচিব অনিক রায়। সামান্তা শারমিন একসময় রাষ্ট্রচিন্তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আর অনিক রায় বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

আত্মপ্রকাশ কবে, কোথায়

তরুণদের উদ্যোগে নতুন এই দলের আত্মপ্রকাশের আয়োজনের জন্য দুটি জায়গার কথা ভেবেছিল জাতীয় নাগরিক কমিটি। একটি হলো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, অন্যটি ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ। গতকাল রাতে একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানটি হতে পারে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে।

নেতারা জানান, প্রথমে ২৫ ফেব্রুয়ারি দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের কথা ভাবা হয়েছিল; কিন্তু ওই দিন পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বার্ষিকী থাকায় এই দিনে দলের ঘোষণা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি।

দলের আত্মপ্রকাশের আয়োজনের জন্য ইতিমধ্যে একটি প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে জাতীয় নাগরিক কমিটির ৬৮ জন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩০ জন নেতা রয়েছেন। গতকাল বিকেল থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রস্তুতি কমিটির বৈঠক হয়।বৈঠকে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়৷

বৈঠক শেষে জাতীয় নাগরিক কমিটির দুজন নেতা বলেন, বৈঠকে মূলত আয়োজনে বিভিন্ন কাজের জন্য দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়।