ঢাকা 9:02 am, Wednesday, 18 June 2025

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নতুন বাংলাদেশের চার্টার হয়ে থাকবে : প্রধান উপদেষ্টা

  • Reporter Name
  • Update Time : 11:35:36 pm, Wednesday, 15 January 2025
  • 45 Time View

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’। এই সংস্কার প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা যেটা গঠন করতে চাচ্ছি, তার উদ্দেশ্য হলো- এটা থেকে গণঅভ্যুত্থানের একটা চার্টার তৈরি করা। যা হবে নতুন বাংলাদেশের একটা চার্টার। এটা মতৈক্যর ভিত্তিতে তৈরি হবে। নির্বাচন হবে, সবকিছুই হবে; কিন্তু চার্টার থেকে সরা যাবে না।

আজ বুধবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চার সংস্কার কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর জমা দেন। এ সময় অধ্যাপক ইউনূস সংস্কার কমিশনের সদস্যদের উদ্দেশে এ কথা বলেন।

সংবিধান সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থা, দুদক এবং পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন আজ প্রধান উপদেষ্টার হাতে হস্তান্তর করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন এই চার্টারের একটা অংশ হবে এবং ঐকমতের নির্বাচন হবে। তা না হলে চার্টার হারিয়ে যাবে। কাজেই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

তিনি বলেন, এটা শুধু একটা আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বহু ধরনের বৈঠক হয়, রিপোর্ট প্রকাশ হয়, আনুষ্ঠানিকতা হয়; কিন্তু আজকের আনুষ্ঠানিকতা সেগুলোর চাইতে অনেক ঊর্ধ্বে। আজকের এই ঘটনা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। কারণ ইতিহাসের প্রবাহ থেকেই এই কমিশনগুলোর সৃষ্টি হয়েছে।

একটা ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির হঠাৎ পুনরুত্থান হয়েছে, মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে- মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেখান থেকেই ইতিহাসের সৃষ্টি, আজকের এই অনুষ্ঠান সেই ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা বিচ্ছিন্ন কোনও প্রতিবেদন নয়। আজ যে প্রতিবেদনগুলো আমরা হাতে নিলাম, অবশ্যই এটা আমাদের দেশের জন্য বড় একটি চর্চা। কেউ সেটা অস্বীকার করবে না।

অধ্যাপক ইউনূস কমিশনের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে সেটার কাঠামো তৈরির কাজ আপনাদের হাতে দিয়েছিলাম কমিশনের মাধ্যমে। স্বপ্ন আছে এখনও, সেই স্বপ্নের রূপরেখাগুলো তুলে ধরতে হবে। এটা শেষ নয়, একটা অধ্যায়ের শুরু হলো। স্বপ্ন এবং অভ্যুত্থান পরবর্তী তার যে যাত্রা, সেটা শুরু হলো। এর বড় একটি অংশ এই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হবে যে, আমরা কী করতে চাচ্ছি। এর মাধ্যমে আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা শুরু করব।

তিনি আরও বলেন, সবার মন এতে সায় দিচ্ছে কি না; অঙ্গীকারগুলো পূরণ হচ্ছে কি না- এই আলোচনার রসদ আপনারা তৈরি করে দিয়েছেন।

ড. ইউনূস বলেন, এর মধ্য দিয়ে সবার মতৈক্য হবে। তা না হলে আমরা কী স্বপ্ন দেখলাম? আমরা নিজেরা স্বপ্ন দেখলাম, আর সেই স্বপ্নে মানুষের অংশ নেই সেটাতো হতে পারে না। আমরা সেই স্বপ্নের কতটুকু এখানে নিয়ে এসেছি, সেটার জন্যেই এই আলোচনা। এটি বাইরে থেকে চাপানো কোনও জিনিস নয়, ভেতর থেকে উদ্ভূত একটা জিনিস। আগামীতে মতৈক্য প্রতিষ্ঠার জন্য যে আলোচনা হবে, সেখানে কমিশনের সদস্যরাই নেতৃত্বে দেবেন বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘যেহেতু আপনারাই তাদের পক্ষ থেকে স্বপ্ন দেখেছেন, কীভাবে তাদের স্বপ্ন আপনাদের সঙ্গে একাকার হয়ে যাবে। তার মাধ্যমে আমরা যেটা গঠন করতে চাচ্ছি, যার উদ্দেশ্য হলো এটা গণঅভ্যুত্থানের একটা চার্টার তৈরি হবে। ওই যে নতুন বাংলাদেশের একটা চার্টার, সেরকম চার্টার মতৈক্যের ভিত্তিতে তৈরি হবে। নির্বাচন হবে, সবকিছুই হবে; কিন্তু চার্টার থেকে যাবে না। এই চার্টার থেকে যাবে, ইতিহাসের অংশ হিসেবে এটা আমাদের জাতীয় কমিটমেন্ট। এটা কোনো দলীয় কমিটমেন্ট না। আমরা আশা করছি, সব দল এই চার্টারে সাইনআপ করবে।’

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাংলাদেশি ও বাঙালি জাতির একটা সনদ উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যে সনদ আমরা বুকে নিয়ে অগ্রসর হবো। যত দ্রুত পারি, যত বেশি পরিমাণে এটা বাস্তবায়ন করতে পারি করতে থাকব। ভবিষ্যতে যে নির্বাচন হবে, এটাও হবে এই চার্টারের ভিত্তিতে। সেটাও যেন ঐকমত্যের সরকার হয়- (পরবর্তী সরকারও যেন বলে) যে, চার্টারকে আমরা ধরে রেখেছি। যত কিছুই হোক, এটা যেন হাত থেকে ছেড়ে না দেই। তা না হলে এই স্বপ্নের যে সংযোগ সেটি থাকবে কী করে! আমরা সেই স্বপ্নের সংযোগ চাই, বাস্তবায়ন চাই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পাঠক প্রিয়

রাজশাহীতে করোনা পরীক্ষার একমাত্র ভরসা রামেক-এর পিসিআর ল্যাব

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নতুন বাংলাদেশের চার্টার হয়ে থাকবে : প্রধান উপদেষ্টা

Update Time : 11:35:36 pm, Wednesday, 15 January 2025

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’। এই সংস্কার প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা যেটা গঠন করতে চাচ্ছি, তার উদ্দেশ্য হলো- এটা থেকে গণঅভ্যুত্থানের একটা চার্টার তৈরি করা। যা হবে নতুন বাংলাদেশের একটা চার্টার। এটা মতৈক্যর ভিত্তিতে তৈরি হবে। নির্বাচন হবে, সবকিছুই হবে; কিন্তু চার্টার থেকে সরা যাবে না।

আজ বুধবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চার সংস্কার কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর জমা দেন। এ সময় অধ্যাপক ইউনূস সংস্কার কমিশনের সদস্যদের উদ্দেশে এ কথা বলেন।

সংবিধান সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থা, দুদক এবং পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন আজ প্রধান উপদেষ্টার হাতে হস্তান্তর করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন এই চার্টারের একটা অংশ হবে এবং ঐকমতের নির্বাচন হবে। তা না হলে চার্টার হারিয়ে যাবে। কাজেই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

তিনি বলেন, এটা শুধু একটা আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বহু ধরনের বৈঠক হয়, রিপোর্ট প্রকাশ হয়, আনুষ্ঠানিকতা হয়; কিন্তু আজকের আনুষ্ঠানিকতা সেগুলোর চাইতে অনেক ঊর্ধ্বে। আজকের এই ঘটনা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। কারণ ইতিহাসের প্রবাহ থেকেই এই কমিশনগুলোর সৃষ্টি হয়েছে।

একটা ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির হঠাৎ পুনরুত্থান হয়েছে, মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে- মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেখান থেকেই ইতিহাসের সৃষ্টি, আজকের এই অনুষ্ঠান সেই ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা বিচ্ছিন্ন কোনও প্রতিবেদন নয়। আজ যে প্রতিবেদনগুলো আমরা হাতে নিলাম, অবশ্যই এটা আমাদের দেশের জন্য বড় একটি চর্চা। কেউ সেটা অস্বীকার করবে না।

অধ্যাপক ইউনূস কমিশনের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে সেটার কাঠামো তৈরির কাজ আপনাদের হাতে দিয়েছিলাম কমিশনের মাধ্যমে। স্বপ্ন আছে এখনও, সেই স্বপ্নের রূপরেখাগুলো তুলে ধরতে হবে। এটা শেষ নয়, একটা অধ্যায়ের শুরু হলো। স্বপ্ন এবং অভ্যুত্থান পরবর্তী তার যে যাত্রা, সেটা শুরু হলো। এর বড় একটি অংশ এই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হবে যে, আমরা কী করতে চাচ্ছি। এর মাধ্যমে আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা শুরু করব।

তিনি আরও বলেন, সবার মন এতে সায় দিচ্ছে কি না; অঙ্গীকারগুলো পূরণ হচ্ছে কি না- এই আলোচনার রসদ আপনারা তৈরি করে দিয়েছেন।

ড. ইউনূস বলেন, এর মধ্য দিয়ে সবার মতৈক্য হবে। তা না হলে আমরা কী স্বপ্ন দেখলাম? আমরা নিজেরা স্বপ্ন দেখলাম, আর সেই স্বপ্নে মানুষের অংশ নেই সেটাতো হতে পারে না। আমরা সেই স্বপ্নের কতটুকু এখানে নিয়ে এসেছি, সেটার জন্যেই এই আলোচনা। এটি বাইরে থেকে চাপানো কোনও জিনিস নয়, ভেতর থেকে উদ্ভূত একটা জিনিস। আগামীতে মতৈক্য প্রতিষ্ঠার জন্য যে আলোচনা হবে, সেখানে কমিশনের সদস্যরাই নেতৃত্বে দেবেন বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘যেহেতু আপনারাই তাদের পক্ষ থেকে স্বপ্ন দেখেছেন, কীভাবে তাদের স্বপ্ন আপনাদের সঙ্গে একাকার হয়ে যাবে। তার মাধ্যমে আমরা যেটা গঠন করতে চাচ্ছি, যার উদ্দেশ্য হলো এটা গণঅভ্যুত্থানের একটা চার্টার তৈরি হবে। ওই যে নতুন বাংলাদেশের একটা চার্টার, সেরকম চার্টার মতৈক্যের ভিত্তিতে তৈরি হবে। নির্বাচন হবে, সবকিছুই হবে; কিন্তু চার্টার থেকে যাবে না। এই চার্টার থেকে যাবে, ইতিহাসের অংশ হিসেবে এটা আমাদের জাতীয় কমিটমেন্ট। এটা কোনো দলীয় কমিটমেন্ট না। আমরা আশা করছি, সব দল এই চার্টারে সাইনআপ করবে।’

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাংলাদেশি ও বাঙালি জাতির একটা সনদ উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যে সনদ আমরা বুকে নিয়ে অগ্রসর হবো। যত দ্রুত পারি, যত বেশি পরিমাণে এটা বাস্তবায়ন করতে পারি করতে থাকব। ভবিষ্যতে যে নির্বাচন হবে, এটাও হবে এই চার্টারের ভিত্তিতে। সেটাও যেন ঐকমত্যের সরকার হয়- (পরবর্তী সরকারও যেন বলে) যে, চার্টারকে আমরা ধরে রেখেছি। যত কিছুই হোক, এটা যেন হাত থেকে ছেড়ে না দেই। তা না হলে এই স্বপ্নের যে সংযোগ সেটি থাকবে কী করে! আমরা সেই স্বপ্নের সংযোগ চাই, বাস্তবায়ন চাই।