ঢাকা 4:02 pm, Tuesday, 17 June 2025

জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারে বেজাকে দেওয়া সোনাদিয়া দ্বীপের ভূমি বন্দোবস্ত বাতিল

  • Reporter Name
  • Update Time : 10:13:26 pm, Friday, 16 May 2025
  • 10 Time View

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) দেওয়া কক্সবাজারের মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপের ভূমির বন্দোবস্ত বাতিল করেছে সরকার।

গত ৫ মে ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাসজমি-২ শাখার উপসচিব মাসুদ কামাল স্বাক্ষরিতে এক স্মারকে এ তথ্য জানানো হয়। এর ফলে ৯ হাজার ৪৬৭ একর ভূমি ফিরে পাচ্ছে বন বিভাগ।
স্মারকে বলা হয়, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য বন্দোবস্ত কেস নম্বর ৫/২০১৬ মূলে মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া মৌজার ২ হাজার ৭১২ একর, প্রস্তাবিত সমুদ্র বিলাস মৌজার ৪ হাজার ৮৩৯ একর এবং প্রস্তাবিত চর মকবুল মৌজার ১ হাজার ৯১৮ একরসহ মোট ৯ হাজার ৪৬৭ একর খাসজমি বন্দোবস্ত বাতিল করা হলো।

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইকোপার্কের জন্য জমি দেওয়ার পর সোনাদিয়া দ্বীপে গাছ কাটা, চিংড়ির ঘের নির্মাণসহ বিভিন্ন পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে, যার ফলে দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্েযর মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুনরুদ্ধারের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেবে।
সোনাদিয়া দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর মধ্যে থাকবে : অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে জমি দখলমুক্ত করা। খালের মুখ ও শাখা-প্রশাখার বাঁধ অপসারণ করে জোয়ারের পানি প্রবাহ সুগম করা। এছাড়াও বালিয়াড়ি পুনরুদ্ধার এবং সৈকত সংরক্ষণ করা।

ম্যানগ্রোভ ও নন-ম্যানগ্রোভ গাছের চারা রোপণ করা, যেমন—কেওড়া, কেয়া, নিশিন্দা, নারকেল ও তালগাছ। এ ছাড়াও, দ্বীপের পরিবেশ পুনরুদ্ধারে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে, যা পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়তা করবে।
এর আগে ২০১৭ সালে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলার শর্তে বেজাকে মাত্র ১ হাজার ১ টাকা সেলামিতে এ ভূমি বরাদ্দ দিয়েছিল কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। তখন দেশের বৃহত্তম ইকো-ট্যুরিজম পার্ক গড়ার জন্য পরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যান হাতে নেয় বেজা। মাহিন্দ্র ইঞ্জিনিয়ারিং নামে ভারতের একটি প্রতিষ্ঠানকে এই মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ দেয় বেজা।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ অনুযায়ী, ইকো-ুটুরিজম পার্ক করা হলে দ্বীপের পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, এমন কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রিট দায়ের করে। এর ফলে জমির বরাদ্দ স্থগিত করে দেয় হাইকোর্ট।
এদিকে ভূমি বন্দোবস্ত বাতিল করায় আট বছর পর তা পুনরায় বন বিভাগের অধীনে আসছে। দ্বীপটিকে রক্ষিত এলাকা হিসেবে সংরক্ষণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গত ১৭ মার্চ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, সোনাদিয়া দ্বীপের ৯ হাজার ৪৬৭ একর বনভূমি রক্ষিত এলাকা ঘোষণা করার ফলে সেখানে অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ হবে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা যাচ্ছে।

বেজার অধীনে বরাদ্দ দেওয়া এই জমি এখন বন বিভাগের অধীনে ফিরে আসছে এবং এর হস্তান্তর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

বেজার পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন ও মনিটরিং) শাহীন আক্তার সুমি বলেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র:বাসস

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পাঠক প্রিয়

রাজশাহীতে করোনা পরীক্ষার একমাত্র ভরসা রামেক-এর পিসিআর ল্যাব

জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারে বেজাকে দেওয়া সোনাদিয়া দ্বীপের ভূমি বন্দোবস্ত বাতিল

Update Time : 10:13:26 pm, Friday, 16 May 2025

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) দেওয়া কক্সবাজারের মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপের ভূমির বন্দোবস্ত বাতিল করেছে সরকার।

গত ৫ মে ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাসজমি-২ শাখার উপসচিব মাসুদ কামাল স্বাক্ষরিতে এক স্মারকে এ তথ্য জানানো হয়। এর ফলে ৯ হাজার ৪৬৭ একর ভূমি ফিরে পাচ্ছে বন বিভাগ।
স্মারকে বলা হয়, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য বন্দোবস্ত কেস নম্বর ৫/২০১৬ মূলে মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া মৌজার ২ হাজার ৭১২ একর, প্রস্তাবিত সমুদ্র বিলাস মৌজার ৪ হাজার ৮৩৯ একর এবং প্রস্তাবিত চর মকবুল মৌজার ১ হাজার ৯১৮ একরসহ মোট ৯ হাজার ৪৬৭ একর খাসজমি বন্দোবস্ত বাতিল করা হলো।

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইকোপার্কের জন্য জমি দেওয়ার পর সোনাদিয়া দ্বীপে গাছ কাটা, চিংড়ির ঘের নির্মাণসহ বিভিন্ন পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে, যার ফলে দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্েযর মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুনরুদ্ধারের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেবে।
সোনাদিয়া দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর মধ্যে থাকবে : অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে জমি দখলমুক্ত করা। খালের মুখ ও শাখা-প্রশাখার বাঁধ অপসারণ করে জোয়ারের পানি প্রবাহ সুগম করা। এছাড়াও বালিয়াড়ি পুনরুদ্ধার এবং সৈকত সংরক্ষণ করা।

ম্যানগ্রোভ ও নন-ম্যানগ্রোভ গাছের চারা রোপণ করা, যেমন—কেওড়া, কেয়া, নিশিন্দা, নারকেল ও তালগাছ। এ ছাড়াও, দ্বীপের পরিবেশ পুনরুদ্ধারে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে, যা পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়তা করবে।
এর আগে ২০১৭ সালে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলার শর্তে বেজাকে মাত্র ১ হাজার ১ টাকা সেলামিতে এ ভূমি বরাদ্দ দিয়েছিল কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। তখন দেশের বৃহত্তম ইকো-ট্যুরিজম পার্ক গড়ার জন্য পরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যান হাতে নেয় বেজা। মাহিন্দ্র ইঞ্জিনিয়ারিং নামে ভারতের একটি প্রতিষ্ঠানকে এই মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ দেয় বেজা।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ অনুযায়ী, ইকো-ুটুরিজম পার্ক করা হলে দ্বীপের পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, এমন কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রিট দায়ের করে। এর ফলে জমির বরাদ্দ স্থগিত করে দেয় হাইকোর্ট।
এদিকে ভূমি বন্দোবস্ত বাতিল করায় আট বছর পর তা পুনরায় বন বিভাগের অধীনে আসছে। দ্বীপটিকে রক্ষিত এলাকা হিসেবে সংরক্ষণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গত ১৭ মার্চ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, সোনাদিয়া দ্বীপের ৯ হাজার ৪৬৭ একর বনভূমি রক্ষিত এলাকা ঘোষণা করার ফলে সেখানে অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ হবে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা যাচ্ছে।

বেজার অধীনে বরাদ্দ দেওয়া এই জমি এখন বন বিভাগের অধীনে ফিরে আসছে এবং এর হস্তান্তর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

বেজার পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন ও মনিটরিং) শাহীন আক্তার সুমি বলেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র:বাসস