ঢাকা 4:17 pm, Tuesday, 17 June 2025
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আইনি প্রক্রিয়ায় আটকে আছে জকসু নির্বাচন

  • Reporter Name
  • Update Time : 09:19:57 am, Monday, 10 February 2025
  • 49 Time View

অবশেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পথ খুলছে। আইনে ছাত্র সংসদের বিধান যুক্ত না থাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় ১৯ বছরেও নির্বাচন হয়নি। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নীতিমালা ইতিমধ্যে সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হয়েছে। এখন আইনি প্রক্রিয়া শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলেই নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে সুষ্ঠু ধারার রাজনৈতিক চর্চার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি তোলা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের বিধান না থাকায় দ্রুত নীতিমালা প্রণয়ন ও নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি ছাত্র সংগঠনও একই দাবিতে কর্মসূচি পালন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে জকসু বিধান যুক্ত করার উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য রেজাউল করিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদ নিয়ে কোনো বিধান ছিল না। ইতিমধ্যে সিন্ডিকেট সভায় জকসুর নীতিমালা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন জকসু নিয়ে আর কোনো বাধা নেই। সিন্ডিকেটে অনুমোদিত নীতিমালার আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে অধ্যাদেশ জারি হলে এটি আইন হিসেবে গৃহীত হবে।’

বিশ্ববিদ্যায় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার আইন ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫’–এ ছাত্র সংসদের বিষয়টি যুক্ত ছিল না। প্রতিষ্ঠার পর গত প্রায় ১৯ বছরেও ছাত্র সংসদ বিধান যুক্ত করা হয়নি। ফলে নির্বাচনও হয়নি। যদিও ২০১৯ সালে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে জকসু গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটি গঠনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়ন করে জমা দিলেও সিন্ডিকেটে তা পাস হয়নি।

গত ৫ আগস্টের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জকসু নির্বাচনের জোরালো দাবি তোলেন। প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আবাসন, ক্যানটিন, মানসম্মত লাইব্রেরিসহ নানা সংকট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তুলে ধরাসহ শিক্ষার্থীদের যাবতীয় অধিকার নিশ্চিত করতে ছাত্র সংসদ অত্যন্ত জরুরি। তাই দ্রুত জকসু নির্বাচন দিতে হবে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করে ফিন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেজবা উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিয়মিত জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে শিক্ষার্থীদের প্রতি ছাত্রনেতাদের জবাবদিহির পথ তৈরি হবে। সেই জবাবদিহির জায়গা থেকে ছাত্রনেতারা চাইলেও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ব্যাহত হয়, এমন কোনো কাজ বা লেজুড়বৃত্তিক দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। তাই তিনি ছাত্র সংসদ নির্বাচন চান।

সম্প্রতি ছাত্র অধিকার পরিষদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জকসু নীতিমালা ও নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে লিখিত রূপরেখার দাবি জানায়। ছাত্রশিবির জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জকসু নির্বাচনের দাবিতে গত নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে সংবাদ সম্মেলনে করে।

শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জকসুর নীতিমালা প্রণয়নে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জকসুর খসড়া (পরিমার্জিত  ও সংশোদিত) নীতিমালা জমা দেয়। প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে জকসু নীতিমালা অনুমোদিত হয়। সিন্ডিকেটে অনুমোদিত নীতিমালার আইনি মতামত গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ সাবিনা শরমীনসহ দুজন অধ্যাপককে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সাবিনা শরমীন গত বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বলেন, ‘জকসু বিধান সিন্ডিকেটে পাস হওয়ার পর রেজল্যুশন আকারে চিঠি আসার কথা, সেটা এখনো আমার কাছে আসেনি। চিঠি এলেই আমরা পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করব।’

ছাত্রসংগঠনগুলো কী বলছে

জকসু নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির সব ছাত্রসংগঠন। তবে কারা ভোট দিতে বা নির্বাচন করতে পারবেন, তাঁদের বয়স কত হবে—এসব নিয়ে সংগঠনগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক জুবায়ের ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের দিকে নজর রাখার জন্য এবং প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রয়োজন। তাঁর মতে, প্রাক্তন শিক্ষার্থী নয়, বরং বর্তমান শিক্ষার্থীরা জকসু প্রতিনিধি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভালো। কারণ, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত।

গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার জন্য ছাত্র সংসদের নির্বাচন প্রয়োজন বলে মনে করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সামসুল আরেফিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।

ছাত্রশিবিরের সভাপতি আসাদুল ইসলাম  বলেন, ‘আইন পাস করে দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে স্মারকলিপি দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। যাঁরা পাস করে বের হয়েছেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণে কাজ করতে পারবেন না।’

ছাত্র অধিকার পরিষদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এ কে এম রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আগে ঠিক করতে হবে যে শিক্ষার্থী কারা বা শিক্ষার্থীর সংজ্ঞা কী হবে? সেই ক্ষেত্রে যদি শিক্ষার্থীর বয়স ৩০ বছরও হয়, তাহলে তাঁকে ভোটার হওয়ার সুযোগ দেওয়া দরকার।

ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন দরকার উল্লেখ করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ইভান তাহসীভ। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্য দাবিদার।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তাজাম্মুল হক  বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সব সংগঠন গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করছে। আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে কোনো সহিংসতা নেই, যেটা খুবই ইতিবাচক। আইন চূড়ান্ত হলেই জকসু নির্বাচন আয়োজনের জন্য আমরা প্রস্তুত।’

সূত্র: প্রথম আলো

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পাঠক প্রিয়

রাজশাহীতে করোনা পরীক্ষার একমাত্র ভরসা রামেক-এর পিসিআর ল্যাব

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আইনি প্রক্রিয়ায় আটকে আছে জকসু নির্বাচন

Update Time : 09:19:57 am, Monday, 10 February 2025

অবশেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পথ খুলছে। আইনে ছাত্র সংসদের বিধান যুক্ত না থাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় ১৯ বছরেও নির্বাচন হয়নি। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নীতিমালা ইতিমধ্যে সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হয়েছে। এখন আইনি প্রক্রিয়া শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলেই নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে সুষ্ঠু ধারার রাজনৈতিক চর্চার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি তোলা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের বিধান না থাকায় দ্রুত নীতিমালা প্রণয়ন ও নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি ছাত্র সংগঠনও একই দাবিতে কর্মসূচি পালন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে জকসু বিধান যুক্ত করার উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য রেজাউল করিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদ নিয়ে কোনো বিধান ছিল না। ইতিমধ্যে সিন্ডিকেট সভায় জকসুর নীতিমালা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন জকসু নিয়ে আর কোনো বাধা নেই। সিন্ডিকেটে অনুমোদিত নীতিমালার আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে অধ্যাদেশ জারি হলে এটি আইন হিসেবে গৃহীত হবে।’

বিশ্ববিদ্যায় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার আইন ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫’–এ ছাত্র সংসদের বিষয়টি যুক্ত ছিল না। প্রতিষ্ঠার পর গত প্রায় ১৯ বছরেও ছাত্র সংসদ বিধান যুক্ত করা হয়নি। ফলে নির্বাচনও হয়নি। যদিও ২০১৯ সালে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে জকসু গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটি গঠনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়ন করে জমা দিলেও সিন্ডিকেটে তা পাস হয়নি।

গত ৫ আগস্টের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জকসু নির্বাচনের জোরালো দাবি তোলেন। প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আবাসন, ক্যানটিন, মানসম্মত লাইব্রেরিসহ নানা সংকট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তুলে ধরাসহ শিক্ষার্থীদের যাবতীয় অধিকার নিশ্চিত করতে ছাত্র সংসদ অত্যন্ত জরুরি। তাই দ্রুত জকসু নির্বাচন দিতে হবে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করে ফিন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেজবা উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিয়মিত জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে শিক্ষার্থীদের প্রতি ছাত্রনেতাদের জবাবদিহির পথ তৈরি হবে। সেই জবাবদিহির জায়গা থেকে ছাত্রনেতারা চাইলেও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ব্যাহত হয়, এমন কোনো কাজ বা লেজুড়বৃত্তিক দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। তাই তিনি ছাত্র সংসদ নির্বাচন চান।

সম্প্রতি ছাত্র অধিকার পরিষদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জকসু নীতিমালা ও নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে লিখিত রূপরেখার দাবি জানায়। ছাত্রশিবির জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জকসু নির্বাচনের দাবিতে গত নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে সংবাদ সম্মেলনে করে।

শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জকসুর নীতিমালা প্রণয়নে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জকসুর খসড়া (পরিমার্জিত  ও সংশোদিত) নীতিমালা জমা দেয়। প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে জকসু নীতিমালা অনুমোদিত হয়। সিন্ডিকেটে অনুমোদিত নীতিমালার আইনি মতামত গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ সাবিনা শরমীনসহ দুজন অধ্যাপককে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সাবিনা শরমীন গত বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বলেন, ‘জকসু বিধান সিন্ডিকেটে পাস হওয়ার পর রেজল্যুশন আকারে চিঠি আসার কথা, সেটা এখনো আমার কাছে আসেনি। চিঠি এলেই আমরা পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করব।’

ছাত্রসংগঠনগুলো কী বলছে

জকসু নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির সব ছাত্রসংগঠন। তবে কারা ভোট দিতে বা নির্বাচন করতে পারবেন, তাঁদের বয়স কত হবে—এসব নিয়ে সংগঠনগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক জুবায়ের ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের দিকে নজর রাখার জন্য এবং প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রয়োজন। তাঁর মতে, প্রাক্তন শিক্ষার্থী নয়, বরং বর্তমান শিক্ষার্থীরা জকসু প্রতিনিধি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভালো। কারণ, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত।

গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার জন্য ছাত্র সংসদের নির্বাচন প্রয়োজন বলে মনে করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সামসুল আরেফিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।

ছাত্রশিবিরের সভাপতি আসাদুল ইসলাম  বলেন, ‘আইন পাস করে দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে স্মারকলিপি দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। যাঁরা পাস করে বের হয়েছেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণে কাজ করতে পারবেন না।’

ছাত্র অধিকার পরিষদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এ কে এম রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আগে ঠিক করতে হবে যে শিক্ষার্থী কারা বা শিক্ষার্থীর সংজ্ঞা কী হবে? সেই ক্ষেত্রে যদি শিক্ষার্থীর বয়স ৩০ বছরও হয়, তাহলে তাঁকে ভোটার হওয়ার সুযোগ দেওয়া দরকার।

ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন দরকার উল্লেখ করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ইভান তাহসীভ। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্য দাবিদার।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তাজাম্মুল হক  বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সব সংগঠন গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করছে। আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে কোনো সহিংসতা নেই, যেটা খুবই ইতিবাচক। আইন চূড়ান্ত হলেই জকসু নির্বাচন আয়োজনের জন্য আমরা প্রস্তুত।’

সূত্র: প্রথম আলো