ঢাকা 7:28 am, Tuesday, 17 June 2025

দ. কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন : যুদ্ধ নয় শান্তিই চান সীমান্তের গ্রামবাসী

  • Reporter Name
  • Update Time : 09:36:50 pm, Saturday, 31 May 2025
  • 8 Time View

উত্তর কোরিয়া থেকে মাত্র পাথর ছোড়ার দূরত্বে অবস্থিত দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তবর্তী গ্রাম তংইলছন-এ রাজনৈতিক মতাদর্শ যাই হোক না কেন, বাসিন্দাদের চাওয়া একটাই- আগামী প্রেসিডেন্ট যেন উত্তেজনা না বাড়িয়ে শান্তি রক্ষা করেন।

পাজু থেকে এএফপি জানায়, সিউল থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এ গ্রামের নামের অর্থই ‘ঐক্যের গ্রাম’। ১৯৭০-এর দশকে সরকার সীমান্ত পুনর্গঠনের জন্য যে ক’টি গ্রাম গড়ে তোলে, তার এটি একটি। এখানে মূলত সাবেক সৈনিক ও যুদ্ধের সময় বাস্তুচ্যুত হওয়া পরিবারগুলোকেই জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়।

গ্রামটির প্রায় ৪৫০ বাসিন্দার বেশিরভাগই প্রবীণ। কেউ কেউ ১৯৫০-৫৩ সালের কোরীয় যুদ্ধ নিজের চোখে দেখেছেন, আবার কেউ দেখেছেন সামরিক শাসকদের অধীনে কঠোর শাসন, কেউ বা প্রগতিশীলদের সময়কাল।
আগামী ৩ জুন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে গ্রামের মানুষের চাওয়া পরিষ্কার: ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।’ ৮৭ বছর বয়সী কন ইয়ং-হান বলেন, ‘আমরা উত্তরের একদম কাছে থাকি, শুধু চাই উত্তেজনা না বাড়ুক, যুদ্ধ যেন না হয়।’

বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইউন সক ইয়োল-এর পদচ্যুতি ও সাময়িক বরখাস্তের পর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তার উত্তরসূরি হিসেবে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা প্রার্থী হচ্ছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির লি জে-মিয়ং। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি উত্তরের সঙ্গে অনেক বেশি শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল অবস্থান নেবেন।

তংইলছন থেকে উত্তর কোরিয়ার এক বিশাল পতাকা স্পষ্ট দেখা যায়। দুই কোরিয়ার মধ্যে যখন উত্তেজনা বাড়ে, যেমনটি হয়েছিল ইউনের শাসনামলে, তখন গ্রামের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
দক্ষিণের পক্ষ থেকে আবার শুরু হয়- পপ গান, নাটক ও মার্কিন ডলারবাহী বেলুন ছোড়া, উত্তরের পক্ষ থেকে আসে আবর্জনাভর্তি বেলুন। এরপর দুই দেশই সীমান্তে শুরু করে উচ্চমাত্রার স্পিকার প্রচারণা। উত্তরের স্পিকারে রাতদিন বাজতে থাকে ভৌতিক চিৎকার ও করুণ কান্নার শব্দ।

৭৩ বছর বয়সী গ্রামপ্রধান লি ওয়ান-বে বলেন, ‘এগুলো কেবলই আওয়াজ, ভূতুড়ে শব্দ। আমাদের ঘুমাতে দেয় না, ক্ষেতে কাজ করাও কষ্টকর হয়ে পড়ে।’

তংইলছন অবস্থিত সিভিলিয়ান কন্ট্রোল জোন (সিসিজেড)-এ, যা ডিমিলিটারাইজড জোন (ডিএমজেড)-এর নিকটবর্তী একটি সীমিত প্রবেশাধিকার সম্পন্ন এলাকা। যুদ্ধবিরতির ফলে এখনও দুই কোরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধাবস্থায় আছে।
এখানকার বিদ্যালয়ে মাত্র ছয়জন ছাত্র সিসিজেড-এর বাসিন্দা, বাকিরা প্রতিদিন বাসে চড়ে আসে। উত্তরের সামরিক তৎপরতার সময় সিসিজেড বন্ধ হয়ে গেলে শিক্ষকদেরই বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হয়।

উত্তেজনা বাড়লে পর্যটনও বন্ধ হয়ে যায়, অথচ এখানকার ‘ডিএমজেড চাল’ ও ‘ডিএমজেড জিনসেং’-এর বিক্রি ওই পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল।

৭৩ বছর বয়সী গ্রামপ্রধান লি বলেন, ‘জীবন এখানে কঠিন। কে প্রেসিডেন্ট হলো তা বড় কথা নয়, শুধু চাই শান্তিপূর্ণ জীবন।’

৮৫ বছর বয়সী মিন তে-সেউং বলেন, ‘এই গ্রামের শুরুতে সামরিক হুমকি ছিল, উত্তরের অনুপ্রবেশও হতো। এখনকার তুলনায় জীবন অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।’ তিনি রক্ষণশীল দলের প্রার্থী কিম মুন-সু-কে ভোট দেবেন। কারণ হিসেবে বলেন, ‘প্রগতিশীলরা উত্তরের প্রতি বেশি নমনীয়। রক্ষণশীলরা অন্তত সন্দেহপ্রবণ থাকে।’
তবে মিনের ৪৫ বছর বয়সী মেয়ের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। তিনি বলেন, ‘এখানে বাস করায় ঐক্য আমার কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি একত্রীকরণ সম্ভব না-ও হয়, অন্তত ভ্রমণের সুযোগ তো থাকা উচিত। চাই আমার বাবা-মা যেন জীবদ্দশায় সেই দিনটা দেখতে পান।’
তথ্যসূত্র:বাসস

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পাঠক প্রিয়

দ. কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন : যুদ্ধ নয় শান্তিই চান সীমান্তের গ্রামবাসী

Update Time : 09:36:50 pm, Saturday, 31 May 2025

উত্তর কোরিয়া থেকে মাত্র পাথর ছোড়ার দূরত্বে অবস্থিত দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তবর্তী গ্রাম তংইলছন-এ রাজনৈতিক মতাদর্শ যাই হোক না কেন, বাসিন্দাদের চাওয়া একটাই- আগামী প্রেসিডেন্ট যেন উত্তেজনা না বাড়িয়ে শান্তি রক্ষা করেন।

পাজু থেকে এএফপি জানায়, সিউল থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এ গ্রামের নামের অর্থই ‘ঐক্যের গ্রাম’। ১৯৭০-এর দশকে সরকার সীমান্ত পুনর্গঠনের জন্য যে ক’টি গ্রাম গড়ে তোলে, তার এটি একটি। এখানে মূলত সাবেক সৈনিক ও যুদ্ধের সময় বাস্তুচ্যুত হওয়া পরিবারগুলোকেই জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়।

গ্রামটির প্রায় ৪৫০ বাসিন্দার বেশিরভাগই প্রবীণ। কেউ কেউ ১৯৫০-৫৩ সালের কোরীয় যুদ্ধ নিজের চোখে দেখেছেন, আবার কেউ দেখেছেন সামরিক শাসকদের অধীনে কঠোর শাসন, কেউ বা প্রগতিশীলদের সময়কাল।
আগামী ৩ জুন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে গ্রামের মানুষের চাওয়া পরিষ্কার: ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।’ ৮৭ বছর বয়সী কন ইয়ং-হান বলেন, ‘আমরা উত্তরের একদম কাছে থাকি, শুধু চাই উত্তেজনা না বাড়ুক, যুদ্ধ যেন না হয়।’

বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইউন সক ইয়োল-এর পদচ্যুতি ও সাময়িক বরখাস্তের পর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তার উত্তরসূরি হিসেবে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা প্রার্থী হচ্ছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির লি জে-মিয়ং। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি উত্তরের সঙ্গে অনেক বেশি শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল অবস্থান নেবেন।

তংইলছন থেকে উত্তর কোরিয়ার এক বিশাল পতাকা স্পষ্ট দেখা যায়। দুই কোরিয়ার মধ্যে যখন উত্তেজনা বাড়ে, যেমনটি হয়েছিল ইউনের শাসনামলে, তখন গ্রামের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
দক্ষিণের পক্ষ থেকে আবার শুরু হয়- পপ গান, নাটক ও মার্কিন ডলারবাহী বেলুন ছোড়া, উত্তরের পক্ষ থেকে আসে আবর্জনাভর্তি বেলুন। এরপর দুই দেশই সীমান্তে শুরু করে উচ্চমাত্রার স্পিকার প্রচারণা। উত্তরের স্পিকারে রাতদিন বাজতে থাকে ভৌতিক চিৎকার ও করুণ কান্নার শব্দ।

৭৩ বছর বয়সী গ্রামপ্রধান লি ওয়ান-বে বলেন, ‘এগুলো কেবলই আওয়াজ, ভূতুড়ে শব্দ। আমাদের ঘুমাতে দেয় না, ক্ষেতে কাজ করাও কষ্টকর হয়ে পড়ে।’

তংইলছন অবস্থিত সিভিলিয়ান কন্ট্রোল জোন (সিসিজেড)-এ, যা ডিমিলিটারাইজড জোন (ডিএমজেড)-এর নিকটবর্তী একটি সীমিত প্রবেশাধিকার সম্পন্ন এলাকা। যুদ্ধবিরতির ফলে এখনও দুই কোরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধাবস্থায় আছে।
এখানকার বিদ্যালয়ে মাত্র ছয়জন ছাত্র সিসিজেড-এর বাসিন্দা, বাকিরা প্রতিদিন বাসে চড়ে আসে। উত্তরের সামরিক তৎপরতার সময় সিসিজেড বন্ধ হয়ে গেলে শিক্ষকদেরই বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হয়।

উত্তেজনা বাড়লে পর্যটনও বন্ধ হয়ে যায়, অথচ এখানকার ‘ডিএমজেড চাল’ ও ‘ডিএমজেড জিনসেং’-এর বিক্রি ওই পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল।

৭৩ বছর বয়সী গ্রামপ্রধান লি বলেন, ‘জীবন এখানে কঠিন। কে প্রেসিডেন্ট হলো তা বড় কথা নয়, শুধু চাই শান্তিপূর্ণ জীবন।’

৮৫ বছর বয়সী মিন তে-সেউং বলেন, ‘এই গ্রামের শুরুতে সামরিক হুমকি ছিল, উত্তরের অনুপ্রবেশও হতো। এখনকার তুলনায় জীবন অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।’ তিনি রক্ষণশীল দলের প্রার্থী কিম মুন-সু-কে ভোট দেবেন। কারণ হিসেবে বলেন, ‘প্রগতিশীলরা উত্তরের প্রতি বেশি নমনীয়। রক্ষণশীলরা অন্তত সন্দেহপ্রবণ থাকে।’
তবে মিনের ৪৫ বছর বয়সী মেয়ের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। তিনি বলেন, ‘এখানে বাস করায় ঐক্য আমার কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি একত্রীকরণ সম্ভব না-ও হয়, অন্তত ভ্রমণের সুযোগ তো থাকা উচিত। চাই আমার বাবা-মা যেন জীবদ্দশায় সেই দিনটা দেখতে পান।’
তথ্যসূত্র:বাসস