ঢাকা 7:31 am, Tuesday, 17 June 2025

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ অবসানে ‘সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব’ না এলে মধ্যস্থতা থেকে সরে দাঁড়াবে ওয়াশিংটন

  • Reporter Name
  • Update Time : 11:27:01 am, Wednesday, 30 April 2025
  • 10 Time View

 

facebook sharing button
messenger sharing button
twitter sharing button
whatsapp sharing button

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মঙ্গলবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তিতে যদি দুই দেশ ‘স্পষ্ট প্রস্তাব’ না দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এই মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া থেকে সরে আসবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের জন্য শুরুতেই অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এই উদ্যোগে ধৈর্যের সীমায় পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ১০০ দিন পূর্ণ করার সময় রুবিও ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রশাসন শিগগিরই অন্য ইস্যুর দিকে মনোযোগ দিতে পারে।

পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস সাংবাদিকদের জানান, ‘এই মুহূর্তে দুই পক্ষের কাছ থেকে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ‘সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব’ প্রয়োজন। অগ্রগতি না হলে আমরা আর মধ্যস্থতার দায়িত্বে থাকব না।’

তবে চূড়ান্তভাবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।’

সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০ বছর উপলক্ষে আগামী সপ্তাহে মস্কোতে অনুষ্ঠেয় স্মরণ আয়োজনে ঘিরে তিন দিনের অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে ইউক্রেন-সমর্থিত যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘আমরা এমন একটা মুহূর্ত চাই না যেখানে কেবল উৎসব পালনের সুযোগে তিন দিনের বিরতি হয়। আমরা চাই একটি পূর্ণাঙ্গ, স্থায়ী অস্ত্রবিরতি ও যুদ্ধের পরিসমাপ্তি।’

চাপ প্রয়োগের কৌশল?

রুবিও আসলেই মধ্যস্থতা থেকে সরে দাঁড়াতে চাইছেন, না কি এটি একটি চাপ প্রয়োগের কৌশল—তা এখনও পরিষ্কার নয়।

যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে একটি সমঝোতা কাঠামো প্রস্তুত করেছে, যা ইউক্রেনীয়দের মতে, রাশিয়ার দাবি পূরণে অনেকটাই আগ্রহী। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের স্বীকৃতি এবং ভূমি বিনিময়ের বিষয়টি।

পোল্যান্ডে এক ভার্চুয়াল বক্তব্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা সবাই চাই এই যুদ্ধ ন্যায্যভাবে শেষ হোক—পুতিন যেন কোনো পুরস্কার না পান, বিশেষ করে কোনো জমি নয়।’

রাশিয়া এখনও যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবনায় সাড়া দেয়নি। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, মস্কো এখন যুদ্ধক্ষেত্র ও কূটনৈতিক উভয় দিক থেকেই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে এবং ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের আশায় অপেক্ষা করছে।

জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ‘জেলেনস্কি ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘাত বাড়াচ্ছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভারসাম্যপূর্ণ শান্তি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছেন।’

অপরদিকে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক জন কেলি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত কাঠামোর ভিত্তিতে আলোচনা করলে উভয় পক্ষ উপকৃত হবে।’ তিনি রাশিয়ার সাম্প্রতিক ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলারও নিন্দা জানান।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ফোন করেছেন এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যবসায়ী স্টিভ উইটকফকে মস্কো পাঠিয়েছেন কূটনৈতিক যোগাযোগের অংশ হিসেবে।

তবে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইউক্রেনীয় নেতাকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্র সহায়তার জন্য যথাযথ কৃতজ্ঞতা না দেখানোর অভিযোগে ভর্ৎসনা করেন।

পরবর্তীতে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানায় এবং এমন একটি চুক্তির চেষ্টা চালায় যাতে দেশটির খনিজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকে।

‘ভুলভাবে পরিচালিত’ আলোচনার অভিযোগ মার্কিন সিনেটর জিন শাহিন, যিনি সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট, বলেন, ‘‘ক্রিমিয়া দখলের স্বীকৃতি দেওয়া হলে তা মস্কো ও বেইজিংকে আরও আগ্রাসনের সাহস দেবে।’’

তিনি বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তির সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে তার দল ক্রমাগত রাশিয়ার কাছে একের পর এক ছাড় দিয়ে আমাদের কূটনৈতিক অবস্থান দুর্বল করেছে এবং মিত্রদের সঙ্গে ঐক্য ক্ষুণ্ন করেছে।’

এদিকে ইউক্রেন মঙ্গলবার পূর্ব দনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের সাতটি গ্রাম খালি করার নির্দেশ দিয়েছে, যেগুলো আগে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে থাকলেও বর্তমানে রুশ বাহিনীর অগ্রগতির কারণে হুমকির মুখে পড়েছে।

গত সপ্তাহে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভের একটি আবাসিক এলাকায় আঘাত করে, যা ছিল আক্রমণের শুরুর পর থেকে রাজধানীতে অন্যতম ভয়াবহ হামলা।

এই হামলার পর ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘ভ্লাদিমির, থামুন।’

তথ্যসূত্র : বাসস

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পাঠক প্রিয়

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ অবসানে ‘সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব’ না এলে মধ্যস্থতা থেকে সরে দাঁড়াবে ওয়াশিংটন

Update Time : 11:27:01 am, Wednesday, 30 April 2025

 

facebook sharing button
messenger sharing button
twitter sharing button
whatsapp sharing button

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মঙ্গলবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তিতে যদি দুই দেশ ‘স্পষ্ট প্রস্তাব’ না দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এই মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া থেকে সরে আসবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের জন্য শুরুতেই অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এই উদ্যোগে ধৈর্যের সীমায় পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ১০০ দিন পূর্ণ করার সময় রুবিও ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রশাসন শিগগিরই অন্য ইস্যুর দিকে মনোযোগ দিতে পারে।

পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস সাংবাদিকদের জানান, ‘এই মুহূর্তে দুই পক্ষের কাছ থেকে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ‘সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব’ প্রয়োজন। অগ্রগতি না হলে আমরা আর মধ্যস্থতার দায়িত্বে থাকব না।’

তবে চূড়ান্তভাবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।’

সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০ বছর উপলক্ষে আগামী সপ্তাহে মস্কোতে অনুষ্ঠেয় স্মরণ আয়োজনে ঘিরে তিন দিনের অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে ইউক্রেন-সমর্থিত যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘আমরা এমন একটা মুহূর্ত চাই না যেখানে কেবল উৎসব পালনের সুযোগে তিন দিনের বিরতি হয়। আমরা চাই একটি পূর্ণাঙ্গ, স্থায়ী অস্ত্রবিরতি ও যুদ্ধের পরিসমাপ্তি।’

চাপ প্রয়োগের কৌশল?

রুবিও আসলেই মধ্যস্থতা থেকে সরে দাঁড়াতে চাইছেন, না কি এটি একটি চাপ প্রয়োগের কৌশল—তা এখনও পরিষ্কার নয়।

যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে একটি সমঝোতা কাঠামো প্রস্তুত করেছে, যা ইউক্রেনীয়দের মতে, রাশিয়ার দাবি পূরণে অনেকটাই আগ্রহী। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের স্বীকৃতি এবং ভূমি বিনিময়ের বিষয়টি।

পোল্যান্ডে এক ভার্চুয়াল বক্তব্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা সবাই চাই এই যুদ্ধ ন্যায্যভাবে শেষ হোক—পুতিন যেন কোনো পুরস্কার না পান, বিশেষ করে কোনো জমি নয়।’

রাশিয়া এখনও যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবনায় সাড়া দেয়নি। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, মস্কো এখন যুদ্ধক্ষেত্র ও কূটনৈতিক উভয় দিক থেকেই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে এবং ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের আশায় অপেক্ষা করছে।

জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ‘জেলেনস্কি ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘাত বাড়াচ্ছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভারসাম্যপূর্ণ শান্তি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছেন।’

অপরদিকে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক জন কেলি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত কাঠামোর ভিত্তিতে আলোচনা করলে উভয় পক্ষ উপকৃত হবে।’ তিনি রাশিয়ার সাম্প্রতিক ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলারও নিন্দা জানান।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ফোন করেছেন এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যবসায়ী স্টিভ উইটকফকে মস্কো পাঠিয়েছেন কূটনৈতিক যোগাযোগের অংশ হিসেবে।

তবে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইউক্রেনীয় নেতাকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্র সহায়তার জন্য যথাযথ কৃতজ্ঞতা না দেখানোর অভিযোগে ভর্ৎসনা করেন।

পরবর্তীতে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানায় এবং এমন একটি চুক্তির চেষ্টা চালায় যাতে দেশটির খনিজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকে।

‘ভুলভাবে পরিচালিত’ আলোচনার অভিযোগ মার্কিন সিনেটর জিন শাহিন, যিনি সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট, বলেন, ‘‘ক্রিমিয়া দখলের স্বীকৃতি দেওয়া হলে তা মস্কো ও বেইজিংকে আরও আগ্রাসনের সাহস দেবে।’’

তিনি বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তির সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে তার দল ক্রমাগত রাশিয়ার কাছে একের পর এক ছাড় দিয়ে আমাদের কূটনৈতিক অবস্থান দুর্বল করেছে এবং মিত্রদের সঙ্গে ঐক্য ক্ষুণ্ন করেছে।’

এদিকে ইউক্রেন মঙ্গলবার পূর্ব দনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের সাতটি গ্রাম খালি করার নির্দেশ দিয়েছে, যেগুলো আগে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে থাকলেও বর্তমানে রুশ বাহিনীর অগ্রগতির কারণে হুমকির মুখে পড়েছে।

গত সপ্তাহে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভের একটি আবাসিক এলাকায় আঘাত করে, যা ছিল আক্রমণের শুরুর পর থেকে রাজধানীতে অন্যতম ভয়াবহ হামলা।

এই হামলার পর ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘ভ্লাদিমির, থামুন।’

তথ্যসূত্র : বাসস